আন্দোলনের নামে অরাজকতার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বললেন রাষ্ট্রপতি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

নতুন সংসদের শুরুতে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা। এই নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। নির্বাচনে জয় হয়েছে দেশের জনগণের, জয় হয়েছে গণতন্ত্রের।

ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরুতে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। এর আগে বিকাল ৩টায় সংসদের বৈঠক শুরু হলে স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার পদে অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষে সংসদের বৈঠক আগামী রোববার বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। নতুন সংসদের শুরু এবং বছরের শুরুর অধিবেশনে সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির এই ভাষণের আগেই মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনুমোদন দেয়া হয়। গত বছরের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়া মো. সাহাবুদ্দিনের এটাই ছিল সংসদে দেয়া প্রথম ভাষণ।

রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় কর্মসূচি পালন করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সরকারও এক্ষেত্রে সংযত আচরণ করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা। গত দেড় দশকে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আরও উন্নতি করতে হবে। ভবিষ্যতে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সকল গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করে জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে এর প্রভাব আমাদের ওপরও পড়বে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কৃষি খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে, উচ্চ-মূল্যের ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানি নিশ্চিত করার জন্য উন্নত কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান করতে হবে, যাতে দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি সম্ভব হয়। আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় সব ভোটার, বিশেষত নবীন ও নারী ভোটারদের অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, জনগণের রায় মেনে নিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের শান্ত-স্নিগ্ধ যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের গণতন্ত্র বিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখলেও গণতন্ত্রের শাণিত চেতনা ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সকল পদক্ষেপ সার্থক হয়েছে। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে।

দীর্ঘ ভাষণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও গত প্রায় দেড় দশক যাবৎ জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ছয় দশমিক সাত শতাংশের বেশি। এ সময়ে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার এবং জাতীয় বাজেটের আকার নয় গুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রপতি বলেন, করোনা অতিমারির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশসমূহ এবং রাশিয়ার মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন অবরোধ আরোপের ফলে খাদ্য, জ্বালানিসহ বিশ্বব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে যার প্রভাব জনজীবনে পড়েছে। সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতকরণের চেষ্টা করেছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়নের মূল ভিত্তি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা। গণতন্ত্রের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হলে উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয়। গত দেড় দশকে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বজায় থাকার কারণে দেশের এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। উন্নয়ন স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত, তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। উন্নয়নের এ গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সংসদ গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মূলভিত্তি। জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি জনগণের সব প্রত্যাশার ধারক ও বাহক। তাদের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের কল্যাণে সংসদ যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। 

সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণ অনেক আশা নিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, যাতে তাদের চাওয়া-পাওয়া সংসদে তুলে ধরেন। এটাই সংসদ-সদস্য হিসেবে আপনাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজের সব নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বিভিন্ন গোষ্ঠী, দল ও সংগঠনের চাওয়া-পাওয়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমন্বয়সাধন করতে হয় জাতীয় সংসদকে। সংসদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ- আইন প্রণয়ন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিসমূহে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার জন্য সংসদ-সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যাতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

বিরোধী দলের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, মত-পথের ভিন্নতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে কোনো মতদ্বৈধতা জনগণ প্রত্যাশা করে না। তাই সংসদকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে সকলের প্রতি তিনি আন্তরিক আহ্বান জানান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002924919128418