আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন ১৯ ভিসি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

তারা যতটা না ভালো শিক্ষক তার চেয়ে অধিকতরো দলবাজ ও তদবিরবাজ হিসেবে শিক্ষাখাতে পরিচিত। ফলে সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবির মুখে এ পর্যন্ত দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যে ১৯ টির ভিসি (উপাচার্য) পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ পদত্যাগ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সৌমিত্র শেখর এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম। আরো অন্তত দশজন ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত আছে।

তবে নতুন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে সেখানে শিক্ষার্থী না থাকায় ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনও নেই। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে উপাচার্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে না থাকলেও সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নেননি। সেখানেও তেমন চাপে নেই ভিসিরা।

পদত্যাগ করেছেন স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। তাঁরা হলেন গুণী শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল । এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু তাহের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার।

এ ছাড়া দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত কাটপেস্ট করে অধ্যাপক হওয়া এবং আমির হোসেন আমুর তদবিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ বাগানো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান। এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলকাানা উপাচার্য সাদেকা হালিম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, অনেক আগে থেকেই ছাত্রবিরোধী হিসেবে পরিচিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মিহির রঞ্জন হালদার এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. হাবিবুর রহমান।

পদত্যাগ করা অন্য উপাচার্যরা হলেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ফরহাদ হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমদাদুল হক চৌধুরী, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম কবীর, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. কামরুল আলম খান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম।

গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর শিক্ষকদের ডরমিটরি ও ভিসি বাংলোতে তালা মেরে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তিন দফা দাবিতে প্রশাসনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপাচার্য ছাড়াও তাঁর অনুগত হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আতাউর রহমান, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবির, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী জোবায়ের হোসেন এবং পরিবহন প্রশাসক ড. মো. আরিফুর রহমানের পদত্যাগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে দলীয় রাজনীতির অপচেষ্টা করলে শাস্তির বিধানের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. দিদার-উল-আলম, উপ-উপাচার্য আবদুল বাকী ও রেজিস্ট্রার মো. জসিম উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক, উপাচার্যের বাসভবনের ফটক এবং একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত অনলাইন ক্লাসও অনুষ্ঠিত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা জানান, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। ট্রেজারার এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন, রেজিস্ট্রারকে সরানো হলেও তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। কিন্তু উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ করছেন না। তাঁরা ক্যাম্পাসেও আসছেন না। তাঁরা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023660659790039