আন্দোলন ইস্যুতে বিভক্ত চবি শিক্ষক সমিতি

চবি প্রতিনিধি |

কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি।

গতকাল শনিবার রাতে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক আবদুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়।

শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে গড়িমসি এবং শিক্ষক নিয়োগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির অভিযোগ ও চারুকলা ইনস্টিটিউটে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনের ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে চরম ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগামীকাল সোমবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনিবাহী পরিষদের অনুষ্ঠিত সভার ৩ নম্বর আলোচ্যসূচির অধীনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষক সমিতির অব্যাহত দাবি সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পন্ন না করে চরম ভারসাম্যহীন একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, এক বছরের অধিক সময় ধরে পদোন্নতির জন্য আবেদনকৃত বেশ কিছু শিক্ষকের পদোন্নতি বোর্ড সভা সম্পন্ন না করে বারবার সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাপক হয়রানি ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মতো ক্ষতিসাধন করা, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক অনিয়ম ও অসংগতির ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদ বা অভিযোগকে আমলে নিয়ে তথাকথিত নিয়োগ বাণিজ্য চক্র বা নিয়োগ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়া এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি সৃষ্টিশীল জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র চারুকলা ইনস্টিটিউটে প্রায় আড়াই মাস যাবৎ চলমান অচলাবস্থা নিরসনের ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রশাসন। তাই  ১৬ জানুয়ারি সকাল ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি মানববন্ধন থেকে ঘোষণা করা হবে।

এদিকে একইদিন শনিবার রাতে মানববন্ধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কর্তৃক ঘোষিত ১৬ জানুয়ারির মানববন্ধন অপ্রয়োজনীয় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় চবি উপাচার্যের প্রতিশ্রুতি ও ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং ২২ ডিসেম্বর ও ৮ জানুয়ারির কার্যকরী সভায় সাধারণ সম্পাদকের অনুরোধকে গুরুত্ব না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কর্তৃক এ মানববন্ধন কর্মসূচি অপ্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি৷ দাবী আদায়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্যই হঠাৎ এ কর্মসূচির আহ্বান করা হয়েছে।

‘গত অক্টোবর ও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দুইটি সিন্ডিকেট সভার পূর্বে প্রায় শতাধিক প্রমোশন বোর্ড সম্পন্ন হয়েছে এবং নভেম্বর পর্যন্ত আবেদনকৃত বাকি চারটি বোর্ড (ওশোনোগ্রাফি, রসায়ন, ক্রিমিনোলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ) সর্বশেষ সিন্ডিকেটের পূর্বে প্রমোশন বোর্ডের তারিখ ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু মাননীয় উপাচার্যের অফিসিয়াল ব্যস্ততার কারণে সম্পন্ন করা যায় নাই- যা হওয়া উচিত ছিল। মাননীয় উপাচার্য এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং খুব সহসা বোর্ডগুলো আহ্বান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷  এ অবস্থায় আন্দোলনের ডাক দেয়া কতটা প্রয়োজন? আমি মনে করি, এ কর্মসূচি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সমস্যার সমাধান না করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা’।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিঘ্নিত শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে এবং এ চেষ্টায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও সম্পৃক্ত করেছেন। আমরা সবাই চাই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের এ আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা করে শিক্ষক সমিতির এ মানববন্ধন কতটা সুচিন্তা প্রসূত? আমি মনে করি, এ কর্মসূচি শিক্ষক সমাজকে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখোমুখি করে সংঘাত সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। শিক্ষক সমিতি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে ভূমিকা পালন করতে পারে।  

গত ১০ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন শিক্ষক সমিতির ২০২৩ এর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। এমতাবস্থায়, নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বভার হস্তান্তর করার পূর্বমুহূর্তে এ কর্মসূচির গুরুত্ব কতটুকু? এ আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় যদি নতুন কর্মসূচির প্রয়োজন হয় এবং নতুন কমিটি যদি এতে বিব্ৰতবোধ করে তবে এ আন্দোলনের ফলাফল কি? আমি মনে করি তফসিল ঘোষণার পর রুটিন দায়িত্ব পালন ছাড়া বর্তমান কমিটির এ ধরনের কর্মসূচি হঠকারী সিদ্ধান্ত।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকে সকল সদস্যের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম চালিয়েছি এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়। প্রশাসনের সঙ্গে বরাবরই আলোচনায় অনীহা দেখিয়ে আসছেন। আলোচনার পরিবর্তে সরাসরি আন্দোলনে যাওয়ার দিকেই উনার গুরুত্ব প্রদান বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে বিরাজমান স্থিতিশীল পরিবেশকে নস্যাৎ করার প্রক্রিয়া বৈ কিছু নয়।

এছাড়া শিক্ষক সমিতি গঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য, ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য নয়। সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক ও সদস্যদের পাশ কাটিয়ে একক স্বাক্ষরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি যে সকল সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের নামে যে হীন প্রক্রিয়ায় প্রচার করে চলছেন তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ইতিহাসে বিরল। সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক ও সদস্যদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে নেওয়া এ সকল কর্মকাণ্ড শিক্ষক সমিতির ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এহেন বিতর্কিত কার্যকলাপের মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির মর্যাদাকে তিনি হেয় করেছেন। যার দায়ভার তিনি এড়াতে পারেন না।  

শিক্ষক সমাজের অধিকার আদায়ে আলোচনা ও গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনে চবি শিক্ষক সমিতির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে যে সমস্যার সমাধান সম্ভব সেক্ষেত্রে আন্দোলনের কর্মসূচি কতটা যৌক্তিক? আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিক্ষক সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। আমি আমার মতামত ফোরামে প্রকাশ করেছি। অহেতুক ও অযৌক্তিক আন্দোলনের চেয়ে আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায় উত্তম। আন্দোলনে না গিয়ে আমরা সমস্যা সমাধানে আলোচনা করি এবং স্থিতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024728775024414