বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ গর্হিত কোনো অপরাধ না করেও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের পদবিধারী কিছু সদস্য তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। স্বাভাবিক কারণেই এ হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, সরকার সমর্থক অঙ্গসংগঠনগুলোর একের পর এক অপকর্মের ফলে দেশের নাগরিকদের ভেতর যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে তা সরকারি দলের পক্ষে ভালো নয় জেনেও সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা কেন এসব বন্ধ করতে পারছেন না- সেটিই এখন বড় প্রশ্ন! যুবলীগের কথিত নেতাদের কলঙ্কজনক অধ্যায় শেষ হতে না হতেই ছাত্রলীগের এ কুৎসিত আচরণে মানুষের মনে ধারণা জন্মেছে, যুবলীগের বড় ভাইদের অপকর্মে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছাত্রলীগের সদস্যরা আবরারকে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে প্রমাণ করে দিল যে, বাহুবলে তারাও কম কিসে। কিন্তু সাধারণ নাগরিকদের ভেতর যারা একটু সচেতন তারা এ ঘটনাগুলোকে অন্যভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন।
সন্দেহ নেই, আবরার হত্যাকাণ্ড কিছুদিন দেশের মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশের সব মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা পেয়েছে। এতে সরকারি দলের পক্ষে একটি অন্তত ভালো কাজ হয়েছে, আর তা হল- ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি নিয়ে চারদিকে যে আলোচনার ঝড় উঠেছিল আবরারের এ নির্মম ঘটনার পর তা কিছুটা থিতিয়ে আসবে।
লক্ষণীয়, যুবলীগের সম্রাটসহ অন্যদের গ্রেফতারের পর দেশের প্রধান মিডিয়াগুলোয় কথিত নেতাদের গঠিত সাম্রাজ্য ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের কিচ্ছা-কাহিনী নিয়ে যে বিরাট আকারের শিরোনাম হয়ে আসছিল সে শিরোনামের জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
কাকতালীয়ভাবে আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিও ঘটেছে সম্রাটের গ্রেফতারের ঠিক পরদিন। মানুষ এ নিয়ে হয়তো ব্যস্ত থাকবেন কিছুদিন। চিহ্নিত কিছু মিডিয়াও এ নিয়ে বেশ হই-হুল্লোড় করবে পরিকল্পনামাফিক।
কথিত থিঙ্কট্যাঙ্কের সদস্যদের ইলেকট্রিক মিডিয়ার বিভিন্ন টকশোগুলোতে এ নিয়ে নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ করতে দেখা যাবে। ধীরে ধীরে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনা দৃশ্যের অন্তরালে ঢাকা পড়ে যাবে।
একই উপায়ে আবরারের এ ঘটনা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক স্বাক্ষরিত চুক্তি নিয়ে দেশের নাগরিকের ভেতর যে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাও হয়তো সমালোচনার আড়ালে চলে যাবে। এসব কিছুই কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কল্পিত ধারণা।
আবরার মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া।
বিভিন্ন মিডিয়ায় আবরার সম্পর্কে যে খবর বেরিয়েছে তাতে জানা যায়, তিনি গত ৫ অক্টোবর তার ফেসবুক আইডিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানি সমস্যা ও ভারতের বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার নিয়ে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার সমালোচনা করে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া তিনি কাশ্মীরে ভারতের আগ্রাসন নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচারের সঙ্গে বর্তমানে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাশ্মীরিদের ওপর অত্যাচারের তুলনা করে তিনি বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়েছিলেন যা ভাইরাল হয়েছে। এসব কারণে আবরার সংশ্লিষ্টদের কুদৃষ্টিতে পড়ে গেছেন।
আবরারের মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনায় যতটুকু জানা যায়, ছাত্রলীগ কর্মীরা আবরারের সেলফোন চেক করে আপত্তিকর পোস্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে। আবরারের ভারতবিরোধী বক্তব্যই ছিল ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে আপত্তিকর পোস্ট।
এ জন্য তারা আবরারকে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ। অতএব, এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা যেমন থাকবে তেমনই বাকস্বাধীনতাও থাকার কথা।
কিন্তু তাই বলে সরকারের সমালোচনা করলে কিংবা ভারতবিরোধী বক্তব্য রাখলে গর্হিত অপরাধ হবে- দেশে এমন কোনো আইন আছে বলে আমার জানা নেই। তবে বিগত বছরগুলোতে সরকার সমর্থক অঙ্গসংগঠনগুলোর দৌরাত্ম্য দেখে মনে হয় না দেশের কোনো আইনকে তারা মান্য করে।
আমাদের দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে উদাসীন। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের সমীহ করে চলতে। এরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের তোয়াক্কাও করে না।
আমি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার উল্লেখ করে আমার বক্তব্য স্পষ্ট করছি। ৭ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরের সপ্তম পাতার দ্বিতীয় কলামের শিরোনাম ছিল, ‘প্রতিমন্ত্রীর সামনেই পুলিশকে মারধর ছাত্রলীগ কর্মীর।’
খবরটি পড়লেই বোঝা যাবে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য কতদূর গিয়ে পৌঁছেছে। আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি যখন আবরার হত্যার পর ছাত্রলীগের কথিত নেতাদের গ্রেফতার সম্পর্কে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কতজন ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তরে তিনি ৯ জন তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান। টেলিভিশনে যতটুকু দেখা গেছে তিনি তার সম্পূর্ণ বক্তব্যে তিন তিনবার ৯ তরুণকে গ্রেফতারের কথা বললেও একবারের জন্যও ছাত্রলীগ কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে উচ্চারণ করেননি।
এমনকি যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নাম বলার সময়ও তিনি গ্রেফতারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরেননি।
আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষালয়ে পাঠাই মানুষের মতো মানুষ হতে। ব্যক্তিগত কিংবা দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমরা আমাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাই।
লাশ হয়ে ফেরা অথবা খুন করে জেলের ঘানি টানার জন্য নয়। বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যাল কলেজে সাধারণত মেধাবী শিক্ষার্থীরাই সুযোগ পেয়ে থাকেন। পিতামাতা স্বপ্ন দেখেন তার সন্তান একদিন সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, বংশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। আবরার হত্যায় জড়িত শিক্ষার্থীদের পিতামাতাও একই স্বপ্ন দেখেছিলেন।
অভিযুক্ত এসব শিক্ষার্থীও মেধাবী সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে রাজনীতির লেসোন নিতে গিয়ে আজ তারা এক গাঢ় অন্ধকার কূপে নিমজ্জিত হয়েছে। যে সংগঠনের তারা সদস্য সে সংগঠন কি তাদের এ শিক্ষাই দিয়েছে যে, মতের মিল না হলে, কাজের সমালোচনা করলে কিংবা কারও বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে নিঃশেষ করে দিতে হবে?
টেন্ডারবাজি করা, সহপাঠীদের উত্ত্যক্ত করা কি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পড়ে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস আদর্শ রাজনৈতিক সংগঠন কখনও এমন লেসোন দেয় না। তাহলে তারা এমন শিক্ষা পেল কোথায়? এমন উদ্ধত আচরণের সাহসই বা পেল কীভাবে? আমার ঘনিষ্ঠ কিছু সাবেক ছাত্রনেতা বলেন, কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় আশকারা পেতে পেতে কিছু কিছু কর্মী কল্পনার ফানুসে সওয়ার হয়েছে।
দেশের বেশ কয়েকটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ভঙ্গুর করে এরা সাহসী হয়ে উঠেছে। আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার এ অভিলাষী মনোভাব নিজের যেমন ক্ষতি করেছে, ঠিক তেমনই দলের জন্য বয়ে এনেছে বদনাম।
আমরাও প্রতিপক্ষের এ ধরনের অনেক কর্মসূচি মোকাবেলা করেছি। তাই বলে কখনও এমন বেপরোয়া হইনি। এভাবেই এককালের স্বনামধন্য এসব সাবেক নেতা তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের একটি মন্তব্য আমাদের হতাশ করেছে। ৭ অক্টোবরের দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় আবরার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডকে তিনি কতিপয় ছাত্রের ‘আবেগ’ ও ‘হুজুগ’-এর বহিঃপ্রকাশ বলে বলার চেষ্টা করেছেন। উল্লিখিত পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি ছিল এমন, “তিনি বলেন, ‘কোনো আবেগ’ এবং ‘হুজুগে’ কারা করেছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।’’
আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রথম দিনেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্ররা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়ে প্রতিবাদ মিছিলে। তাদের ওই মিছিলের অনেক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
এর মধ্যে একটি ছবিতে নানা ধরনের ব্যানার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিছিল করতে দেখা যায়। মিছিলের অগ্রভাগে অনেক ব্যানারের মধ্যে একটি ব্যানারের লেখা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। লেখাটি ছিল এ রকম, ‘জানি বিচার চেয়ে লাভ নেই, তবুও আবরার হত্যার বিচার চাই’। বর্তমান বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় বিচারহীনতার যে অনুশীলন চলছে তাতে এ ধরনের ব্যানার থাকাটাই স্বাভাবিক। কোটা আন্দোলন ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ ও হাতুড়ি পেটার পরও যখন দেখেছে অভিযুক্ত কারও বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের বর্তমান ভিপির ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি হামলার পরও যখন বিচার হয় না, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে আবরার হত্যার বিচারও যে আগের মতো বরফ শীতল হয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যাবে সে আশঙ্কাই হয়তো তারা করেছেন।
বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় চাক্ষুষ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু ছাত্রলীগ কর্মীর বেকসুর খালাস পেয়ে যাওয়ার ঘটনা স্মরণ করে হয়তো বর্তমানে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা ব্যানারে তাদের হতাশাই ব্যক্ত করেছেন এভাবে। রাজনীতি যখন রাজনীতিতে থাকে না, আশকারা পাওয়া এসব রাজনৈতিক কর্মীদের কুকীর্তির বিচারকার্যেও তখন প্রশাসনের নানাবিধ চাপ থাকে। সঠিক তদন্ত না করা বা করতে না পারা, সত্য তথ্য-প্রমাণ সঠিকভাবে উত্থাপন না করা গেলে বিচারকার্যে সংশ্লিষ্টদের তখন কিছু করার থাকে না। ফলে ভিকটিম ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হন। এ প্রসঙ্গে ৭ অক্টোবর প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। শিরোনাম ছিল, ‘আদালতে নিজের বুকে গুলি বিচারকের।’ থাইল্যান্ডের এক বিচারক ৪ অক্টোবর পাঁচজন অভিযুক্তকে খুনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে নিজের বুকে গুলি করেন। তবে সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
নিজেকে গুলি করার আগে বিচারক তার লিখিত ও ফেসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘প্রমাণের অভাব থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য তাকে চাপ দেয়া হয়েছিল। আমি যদি আমার শপথ রক্ষা করতে না পারি, তবে আমি অসম্মানিত হয়ে বাঁচার চেয়ে বরং মরে যাব।’
দিন দিন আমাদের সন্তানরা যে অসভ্য মানুষের শিকারে পরিণত হচ্ছে, এর প্রতিকার কী? প্রতিহিংসাপরায়ণ এ আচরণের অবসান কবে হবে তার উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। আবরারকে হত্যার যে কারণ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে তা শুনে ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে আমরা এ কোন যুগে বসবাস করছি? প্রশ্ন জাগে, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে সে দেশের নাগরিক হিসেবে দেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলাও কি মারাত্মক অপরাধ? পাকিস্তান আমলে পরাধীন থেকেও সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে মিছিল করা গেছে, মিটিং করা গেছে। সামরিক শাহীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে স্লোগান দেয়া গেছে। আর এখন? স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বাস করে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হবে? তাও আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী দলের কর্মীদের হাতে? কিছুদিন আগে সরকারি দলের এক নেতার সঙ্গে আলাপকালে খুব সুন্দর একটি কথা তিনি বলেছিলেন। কথাটি এখনও আমার কানে বাজে। তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে আমরা যারা দেশ স্বাধীন করেছি তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।
এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে আরও একটি মুক্তিযুদ্ধ চলছে। সেটি হল অর্থনৈতিক মুক্তির যুদ্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে যুদ্ধ চলছে তাতে অংশগ্রহণকারী সবাই দেশপ্রেমিক। মোট কথা, দেশের স্বার্থের পক্ষে যারা কথা বলেন, আত্মোৎসর্গ করেন, দেশের উন্নয়নে যারা কাজ করেন তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের লোক। তারা সবাই বর্তমানকালের এক একজন মুক্তিযোদ্ধা।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি অনেকেই লিখেছেন, ‘আবরার বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে কথা বলেছেন বলেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তিনি এ যুগের মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের ঘাতকরাও এভাবে আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ পোস্টটি দেখে আমার সরকারি দলের মুক্তিযাদ্ধা সেই নেতার কথাই মনে পড়ে গেল...‘দেশের স্বার্থের পক্ষে যারা কথা বলেন, আত্মোৎসর্গ করেন তারা সবাই বর্তমানকালের এক একজন মুক্তিযোদ্ধা।’
প্রশ্ন হল, একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীর নিষ্ঠুরতা আর কতকাল এ সমাজ সহ্য করবে? আমরা কি ক্রমান্বয়ে মানবিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ থেকে দূরে সরে যাব?
এরশাদ আমলেও এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বসুনিয়া, নূর হোসেন ও ডা. মিলনরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে প্রমাণ দিয়ে গেছেন, দেশকে ভালোবেসে, দেশের স্বার্থরক্ষায় যে কোনো আত্মত্যাগই সুফল বয়ে আনে।
১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ শহীদ তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমেই এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন শুধু ভূগোল পরিবর্তনের জন্য নয়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে সেদিন তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন।
আবরার ফাহাদ যেন তাদেরই উত্তরসূরি। দেশের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে নিজের জীবনকে দান করে গেলেন। দেশের স্বার্থে তিনিও যে আজ বসুনিয়া, নূর হোসেন ও ডা. মিলনের মিছিলে শামিল হলেন।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা