এসএসসির ধারাবাহিকতায় ‘চলনশক্তিহীন’ সেই জ্যোতি হোসেন এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। হুইলচেয়ারে করে কলেজে যাতায়াত আর শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে নিয়েছেন অদম্য এই মেধাবী। বুধবার প্রকাশিত ফলাফলে জ্যোতি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সরকারি শহিদ মশিউর রহমান কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এই কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন।
ঝিকরগাছা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন কমিশনারপাড়া এলাকার মালয়েশিয়াপ্রবাসী কাদের হোসেন ও গৃহিণী রেক্সোনা হোসেনের দুই মেয়ের মধ্যে জ্যোতি বড়। পাঁচ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন জ্যোতি। মেরুদণ্ডে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত কোনো শক্তি পান না তিনি। তাই হুইলচেয়ারই তার ভরসা। হুইলচেয়ারে বসেই ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন তিনি। জ্যোতির সংগ্রামের গল্প বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত মা রেক্সোনা হোসেন ফিরে যান শৈশবে। জ্যোতির তখন পাঁচ বছর বয়স। বেড়াতে গিয়ে ভ্যান থেকে পড়ে
যান। মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়ায় পা থেকে ঘাড় পর্যন্ত শরীর একরকম অবশ ও অচল হয়ে যায়। ঢাকা, ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে তার চিকিত্সা করানো হয়। সর্বশেষ তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে। সেখানে চিকিত্সা চললেও জ্যোতির হাত, পা বা শরীর একরকম প্যারালাইজড, অচল। সেই থেকেই মেয়েকে নিয়ে সংগ্রাম শুরু রেক্সোনা হোসেনের।
এইচএসসির ফলাফলে খুশি জ্যোতি হোসেন জানান, লেখাপড়াই তার সবকিছু। নিয়মিত লেখাপড়া করে প্রতিবন্ধকতা জয় করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এসএসসিতে তার ছোট বোন শ্রুতিলেখক ছিল। এইচএসসিতে তার শ্রুতিলেখক ছিল ঝিকরগাছা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম খাতুন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে লেখাপড়া করলেও জ্যোতি তার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে অবগত। এজন্য তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চান।
জ্যোতি হোসেনের মা বলেন, ‘জ্যোতি এইচএসসি পাস করলেও তার ভবিষ্যত্ অনিশ্চিত। কোথায় কীভাবে ভর্তি করব বা সে কীভাবে লেখাপড়া করবে—এই নিয়ে চিন্তায় ঘুম আসে না।’
সরকারি শহিদ মশিউর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ বিপ্লব কুমার সেন বলেন, ‘চলনশক্তিহীন’ জ্যোতি হোসেন অদম্য মেধাবী হওয়ায় তারা সব সময়ই মেয়েটির প্রতি আন্তরিক ছিলেন। তার ক্লাসগুলো সুবিধাজনক শ্রেণিকক্ষে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি তার সার্বিক বিষয়ে সব সময় খবর নিয়েছেন। মেয়েটির ফলাফলে তিনি খুশি।