মাদরাসা অধিদপ্তর নির্বিকারআবেদন শুরুর আগেই প্রভাষকদের পদোন্নতির গ্রেড

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নতুন এমপিও নীতিমালায় বিভিন্ন বেসরকরি কলেজ ও মাদরাসার অর্ধেক প্রভাষককে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আবেদন নেওয়া শুরুর আগেই দুইটি মাদরাসার প্রভাষকরা পদোন্নতির সুবিধা পাচ্ছেন। যদিও এখনো প্রভাষকদের পদোন্নতির আবেদন গ্রহণের কোনো প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কোনো এক অদৃশ্য শক্তির জোরে দুই মাদরাসার প্রভাষকদের পদোন্নতির পাওয়ার পর প্রাপ্য ৬ কোডে দীর্ঘদিন বেতন দিচ্ছে। ফলে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকার। আবার অবৈধভাবে দেওয়া টাকা একদিন না একদিন ফেরত দিতে হবে। তখন বিপাকে পড়বেন সেই শিক্ষকরা। দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।  

এদিকে বিষয়টি নজরে আসার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কর্মকর্তারা দুইরকম কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি তারা অবগত, কিন্তু ‘মানবিক বিবেচনায়’ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অনিয়ম হয়েছে বলে ধারণা করছেন তারাও। তারা বলছেন আরও তথ্য সংগ্রহ চলছে। আর মহাপরিচালক জানিয়েছেন এ বিষয়টি তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

এ দুই প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। তারা অনিয়ম করে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রভাষকদের অর্ধেক পদোন্নতির আবেদন গ্রহণ শুরু করার তাগিদ জানিয়েছেন। 

দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুরে ভাঙ্গা থানার ইকামাতেদিন ফাযিল মাদরাসা ও বড়গ্রাম আলিম মাদরাসার অর্ধেক প্রভাষক গতবছরের ডিসেম্বর মাস থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত ৬ কোডে বেতন পাচ্ছেন। ফরিদপুরে ভাঙ্গা থানার ইকামাতেদিন ফাযিল মাদরাসায় ২৩ জন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ১২ জনই ৬ষ্ঠ কোডে বেতন পাচ্ছেন। 

অপরদিকে একই থানার বড়গ্রাম আলিম মাদরাসার ৬জন প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক কর্মরত থাকলেও তাদের মধ্যে তিনজন বেতন পাচ্ছেন পদোন্নতির পর প্রাপ্য ৬ষ্ঠ কোডে। 

এদিকে দুই প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকদের আর্থিক সুবিধা পাওয়ার এ ঘটনায় শিক্ষকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মাদরাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সারা দেশের শিক্ষকরা পদোন্নতির সুবিধা না পেলেও দুই মাদরাসার শিক্ষকরা এ সুবিধা পাচ্ছেন। বিষয়টি এমন হলে অবশ্যই তা অনিয়ম। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। একইস সঙ্গে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সব প্রভাষকদের পদোন্নতির জন্য আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে শিক্ষা প্রশাসনকে তাগিদ দিয়েছেন তিনি।  

নতুন নীতিমালা অনুসারে অর্ধেক প্রভাষকদের পদোন্নতির আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, নতুন নীতিমালায় অর্ধেক প্রভাষকদের পদোন্নতির সুযোগের বিষয়টি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। কিন্তু কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এখনো কোন নির্দেশনা দেয় নি। তাই আমরা আবেদন নিতে পারছি না। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিলে আমরা আবেদন নিতে পারবো। 

প্রভাষকদের আবেদন গ্রহণ শুরুর আগেই দুই মাদরাসার প্রভাষক পদোন্নতির পর প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন কিভাবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ধারণা করছি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসার নীতিমালা জারির পর যখন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের হাতে মাদরাসার এমপিও ছিল তখন এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধেক প্রভাষকদের পদোন্নতির পর প্রাপ্য ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। হয়তো তৎকালীন ঢাকার উপপরিচালক তাদের এ কোডে বেতন অনুমোদন দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে আমরা আরও খোঁজ খবর নিচ্ছি।’ ‘কোন একটি অনিয়ম তো হয়েছেই’ যোগ করেন তিনি।

দুই মাদরাসার প্রভাষকরা পদোন্নতির আবেদন শুরুর আগেই সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নজরে আসার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে বেশ কিছু মানুষের রুটিরুজি জড়িত। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হলে ৯জন প্রভাষক ও দুই প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতনভাতা বন্ধ করতে হবে। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা এখনো ব্যবস্থা নেইনি। ’

যদিও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমিন এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগেই দুই মাদরাসার প্রভাষকদের আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তি নিয়ে তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। খোঁজ নিয়ে দেখবো। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002763032913208