ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জাফর আলী আহমদ ছিলেন তুফানগঞ্জ মহকুমা আদালতের উকিল।
আব্বাসউদ্দীনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বলরামপুর স্কুলে। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কোচবিহার কলেজ থেকে আইএ পাস করলেও বিএ পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি তিনি। পরে তিনি সংগীতজগতে প্রবেশ করেন।
কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আব্বাসউদ্দীনের পরিচিতি দেশজোড়া। আধুনিক গান, স্বদেশি গান, ইসলামী গান, পল্লিগীতি, উর্দুগান তিনি গেয়েছেন। তবে পল্লিগীতিতে তার মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। তার ছিলো না কোনো ওস্তাদের তালিম। পরে কিছুদিন ওস্তাদ জমিরউদ্দীন খাঁর কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখেছিলেন। রংপুর ও কোচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গেয়ে আব্বাসউদ্দীন প্রথম সুনাম অর্জন করেন।
পরে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালাগান ইত্যাদি গেয়ে জনপ্রিয় হন। তিনি তার দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লিগানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা আজও অদ্বিতীয়।
তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, গোলাম মোস্তফা প্রমুখের ইসলামী ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন।
আব্বাসউদ্দিন আহমেদ মোট ৪টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই ৪টি সিনেমা হল ‘বিষ্ণুমায়া’ , ‘মহানিশা’, ‘একটি কথা’ ও ‘ঠিকাদার’।
ঠিকাদার সিনেমাতে আব্বাস উদ্দিন একজন কুলির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ধারণা করা হয় যে তিনি এর চেয়ে বেশি সংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও তা উল্লেখ করেন নি। কারণ সেই চরিত্রগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য ছিলো না। এসব সিনেমাতে তিনি গানও করেছিলেন।
‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’ আব্বাসউদ্দীন রচিত একমাত্র গ্রন্থ। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর পল্লিগানের এই মহান সম্রাট মৃত্যুবরণ করেন।