দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি : বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডিসকলেজিয়েট হয়ে মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের ৮ জন শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের সামনে আমরণ অনশনে বসেন তারা। এর আগে বিভাগের সামনে থেকে এক পদযাত্রা বের করেন। পরে প্রশাসন ভবনের সামনে মিলিত হয়ে অনশনে বসেন।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন- গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর থিসিস ও নন-থিসিস পর্যায়ের আট শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, ফয়সাল আহমেদ, তানভির, জয়শ্রী, রিতু পর্না, ফারজানা ইয়াসমিন, ফাতিমা আফরিন মিম ও অনামিকা।
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগের মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জনকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে, যেটা অফিসিয়ালি তাদেরকে কোনোভাবে জানানো হয়নি। নিয়মিত ক্লাস করার পরও এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। শ্রেণিশিক্ষক প্রতিদিন ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ডিপার্টমেন্টে আসেন, যেখানে তিনি তাদের সাড়ে নয়টা থেকে ক্লাসে থাকতে বলতেন এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে শুনে তার ভিত্তিতে এটেন্ডেন্স দিতেন। এই নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্লাসে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত হন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, গোপনে মাত্র ২ দিন সময় দিয়ে ৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষার ফর্মফিলাপ করানো হয়েছে। বাকি ৮ জন শিক্ষার্থীকে এই প্রক্রিয়া থেকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যেটা তারা ফরম ফিলাপের একদম শেষের দিনে নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করেছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি (রোববার) তাদের পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছে।
আমরণ অনশনে বসা মেহেদী হাসান বলেন, প্রতি মাসের শেষে আমাদের কাছ থেকে এটেন্ডেন্স খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হতো। শিক্ষকের ওপর আস্থা রেখে আমরা স্বাক্ষর করে দিতাম। পরবর্তীতে এই স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে আমাদের ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের ডিসকলেজিয়েট করার এবং পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। শ্রেণিশিক্ষক বারবার বলতেন, ‘তোমরা কীভাবে পরীক্ষা দাও আমি দেখে নেবো।’
ফাতিমা আফরিন মিম বলেন, আমাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে ডিসকলেজিয়েট করে আমাদের জীবনকে ধ্বংসের পথে ফেলা হচ্ছে। আমরা সকাল থেকে আমরণ অনশনে বসেছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে উঠবো না। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ক্লাস নিতে ১২টার পরে শিক্ষক আসেন। আমাদের কোর্স অসম্পূর্ণ রেখে ক্লাস শেষ করা হয়েছে। চারুকলায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ওপর অন্যায় করা হয়। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল বলেন, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ এরকম অনেক কথাই তারা লিখেছে। আমি হুমকি দেওয়ার কে? ক্লাসতো আরও কয়েকজন শিক্ষক নিয়েছে, আমিতো একা নিইনি? আপনারা অফিসে এসে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কাগজপত্র সব রেডি আছে। তারা ক্লাস করার পর মাস শেষে অ্যাটেন্ডেন্স শিটে স্বাক্ষরও করেছে। সব সাক্ষ্য প্রমাণ আছে। এখন তারা যদি ক্লাস না করে, তাহলে আমি কীভাবে কী করবো? দয়া করে উপস্থিতি দেখানোর ক্ষমতা আমার নেই। তাদের সঙ্গেতো আমার ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্কও নেই।
ডিসিপ্লিনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, একজন শিক্ষক কি এভাবে কাউকে ডিসকলেজিয়েট করতে পারে? তারা ক্লাসে অনিয়মিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী তারা ডিসকলেজিয়েট হয়েছে।
এখন কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একাডেমিক কমিটিতেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত এসেছে যে নিয়মানুযায়ী যা হয় তাই করতে হবে। নিয়মের ব্যতিক্রম করার সুযোগ নেই।
এর আগে ঘটনার সমাধানে হস্তক্ষেপ কামনা করে গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে সঠিক কোনো সমাধান না পাওয়ায় আজ তারা আমরণ অনশনে বসেন।