'আমারও স্কুলে যেতে মন চাই'

শিবপুর (নরসিংদী) প্রতিনিধি |

'আমারও স্কুলে যেতে মন চাই। কতদিন হয় স্কুলে যাই না। স্কুল ছুটির দিনে আমার বন্ধুরা বিকেলে মাঠে খেলাধুলা করে, কেউবা আবার ঘুরে বেড়ায়। বন্ধুরা আমাকে মাঝে মধ্যে দেখতে আসে। আমার পাশে কিছুক্ষণ বসে থাকে। তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমি সুস্থ হতে চাই, আমাকে একটু সহযোগিতা করেন। সহপাঠীদের মতো চলতে আমারও মনে চাই।' কথাগুলো বলছিল গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়া শিক্ষার্থী বাবুল মিয়া (১৫)।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দুলালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. বাবুল মিয়া। তিন বছর যাবত ঘরের বিছানায় ও বাড়ির উঠানে হুইল চেয়ারে বসে সময় কাটায়। তার বাবার নাম মো. দেলোয়ার হোসেন, পেশায় একজন দিনমজুর। স্ত্রী জরিনা বেগম একজন গৃহিণী। শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিলপাড় গ্রামের বাসিন্দা।
 
বাবুল আকুতি-মিনতি করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, একটি আম গাছ আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমাদের বাড়ির পিছনে একটি বড় আম গাছ ছিল। আম গাছে অনেক আমের মুকুল এসেছে। গাছে উঠে ওষুধ দেয়ার সময় হঠাৎ পা পিছলে গাছ থেকে প্রথমে টিনের চালে পড়ে যাই। টিনের চাল থেকে আবার মাটিতে পড়ে যাই। মাটিতে পড়ে আমি আহত হই। তার পর আমি আর কিছুই বলতে পারবো না।'
 
বাবুল আরো বলে, জ্ঞানহীন অবস্থায় আমাকে আমার পরিবার শিবপুর উপজেলা হাসপাতালে জন্য নিয়ে আসে। এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করেন। জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর জেলা হাসপাতাল থেকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিয়ম মাফিক টিকেট কেটে হাসপাতালে ভর্তি হই। হাসপাতালের  ডাক্তার আমার বাবা মার নিকট বলেন, কোমরে উপরে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে। একমাস চিকিৎসা করার পর হাসপাতালের একজন ডাক্তার আমার পরিবারকে জানায় তাকে অপারেশন করাতে হবে। পরিবারের প্রশ্ন অপারেশন করতে কত টাকা লাগবে। ডাক্তার বলেন প্রায় ১লাখ টাকা। পরবর্তীতে টাকা জোগাড় করতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় গ্রামে বাড়িতে চলে আসি। নিকট আত্মীয় স্বজন, এলাকাবাসীর দ্বারে দ্বারে ঘুরে অর্থ জোগাড় করতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় বিছানায় পড়ে আছি।'
 
বাবুলের বাবা বলেন, আমি একজন দিনমজুর আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ছয়জন। আমি একা উপার্জন করি। প্রায় লাখ খানেক টাকার দরকার, এতো টাকা কোথাও পাব। অভাব অনটনের সংসারে ধার-দেনা করে কোন রকম ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে সংসার চালাইতেছি। ছেলেকে চিকিৎসা করাবো কিভাবে ?


 
বাবুলের মা জরিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার এই অসুস্থ পোলাকে নিয়ে বহু কষ্টে দিন যাপন করছি। আমার ছেলেকে দয়া করে কেউ যদি চিকিৎসা ব্যবস্থা করতো আমি ও আমার পরিবার কষ্ট থেকে রেহাই পাইতাম। যখন তার মনটা খারাপ থাকে তখন  মাঝে-মধ্যে ঘর থেকে তাকে উঠানে এনে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখি।

অসুস্থ বাবুল বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের আপনারা সাংবাদিকরা আমার বিষয়ে জানালে আমি আশা করি, তারা আমার ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031778812408447