নতুন বই হাতে নিয়ে অনেক শিশুর মন খারাপ হয়েছে। কারণ, বইয়ের পৃষ্ঠা এলোমেলো। ছবি দেখে চেহারা বোঝার উপায় নেই। লাল-সবুজের পতাকার রঙ পাল্টে গেছে। বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে বিভ্রাট বেশি। তাই অনেক শিশু বই নেয়নি। আবার কেউ কেউ বদলে দেওয়ার শর্তে বই নিয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে মলাট ঝকঝকে হলেও এর ভেতরে ছাপা ঝাপসা। কোনো কোনো বইয়ের পৃষ্ঠা এলোমেলো। এই বইয়ের ৫৪ পৃষ্ঠার পরে ৫৫ পৃষ্ঠা হওয়ার কথা থাকলেও ৫৪-এর পরে রয়েছে ৭০। এই বইয়ের ১৬টি পৃষ্ঠা বাদ পড়েছে। বইটির মলাট ওল্টালেই পতাকার একটি পরিষ্কার ছবি পাওয়া যাবে। কিন্তু বইয়ের ভেতরের পৃষ্ঠার ছাপা পরিষ্কার নয়। বইয়ের ৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি পতাকার ছবি ছাপা হয়েছে। এই পতাকার লাল অংশটুকু ফোটেনি। সবুজ রঙটুকুও কালচে হয়েছে। ১০৮ পৃষ্ঠায় কবি পরিচিতি অংশে কবি শামসুর রাহমানের ছবি ছাপা হয়েছে।
এতই কালিঝুলি মাখা ছবি যে নিচের নাম না পড়লে বোঝার উপায় নেই, সবার পরিচিত সুদর্শন কবি শামসুর রাহমানের ছবি এটি। একই অবস্থা করা হয়েছে ৪৩ পৃষ্ঠায় কবি সুকুমার বড়ুয়া ও ৫৫ পৃষ্ঠায় আহসান হাবিবের ছবিতেও। ঘাসফুল কবিতার কবি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ছবির দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, এ ছবির কোনো মুখ নেই। শুধুই কালো রঙ। ১১১ পৃষ্ঠায় ছাপা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ছবি দেখে কেউ চিনতে পারবে না।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার ডাকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা খাতুন এ বই না নিয়ে ফেরত দিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, কয়েকটা বই এরকম হয়েছে, তা তাত্ক্ষণিক খেয়াল করা হয়নি। মাহমুদা বইয়ের পাতা ওল্টাতে গিয়ে পৃষ্ঠা এলোমেলো দেখে ফেরত দিয়েছে। অন্য কোথাও এ রকম হয়েছে কি না জানার জন্য রাজশাহীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফোন করলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, তারাও এ ধরনের বই পেয়েছেন। শিক্ষকরা আরো জানান, পঞ্চম শ্রেণির গণিত বইয়ের ৪১ থেকে ৫৭ পর্যন্ত পৃষ্ঠা দুবার ছাপা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বইয়ের চালানে উল্লেখ ছিল, রাজশাহী জেলায় বই ছাপা ও সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং নাজিরেরবাগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। কিন্তু রাজশাহীতে বলাকা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, নাজিরেরবাগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত বইও সরবরাহ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আবুল খায়ের বলেন, কোনো বই ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া গেলে সেগুলো বিদ্যালয়ে জমা দিলেই পরে তাদের ভালো বই সরবরাহ করা হবে।