আমেরিকায় স্নাতক হলেই গ্রিন কার্ড

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

আগামী নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ধীরে ধীরে প্রচারের অভিঘাত বাড়াচ্ছেন। তবে এ বার নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প গ্রিন কার্ডকেই তুরুপের তাস করতে চাইছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।  সম্প্রতি একটি পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে গ্রিন কার্ড নিয়ে বিশেষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, ক্ষমতায় এলে আমেরিকার যে কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হওয়া বিদেশি পড়ুয়াদের হাতে গ্রিন কার্ড তুলে দেবেন তিনি।

ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, মূলত আমেরিকায় থাকা প্রবাসীদের মন জয় করতেই নির্বাচনের আগে ‘ঝুলি থেকে বেড়াল’ বার করেছেন ট্রাম্প। ভোট টানতেই গ্রিন কার্ড নিয়ে এই প্রতিশ্রুতি।

কী এই গ্রিন কার্ড? গ্রিন কার্ড হল অনাবাসীদের আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে বসবাস করার ছাড়পত্র। প্রতি বছর গ্রিন কার্ড চেয়ে তাই বহু আবেদন জমা পড়ে আমেরিকার প্রশাসনের কাছে। বছরে এক লক্ষ আবেদনে ছাড়পত্রও দেয় প্রশাসন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরেই যদি বাইরের দেশের পড়ুয়াদের হাতে গ্রিন কার্ড তুলে দেওয়া হয়, তা হলে আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন গতি আসতে পারে। ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়িত হলে গ্রিন কার্ড হাতে পাওয়ার আশায় বিদেশি পড়ুয়াদের ভিড় আমেরিকায় বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে।

এক বিদেশি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২২-’২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ১০ লক্ষ আন্তর্জাতিক পড়ুয়া আমেরিকার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা জন্য গিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ট্রাম্প যদি গ্রিন কার্ডের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেন, তা হলে সেই সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 

আমেরিকান কংগ্রেস প্রতি বছর সর্বাধিক ২ লক্ষ ২৬ হাজার পারিবারিক স্পনসর গ্রিন কার্ড এবং ১ লক্ষ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান-ভিত্তিক গ্রিন কার্ড দেয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই আমেরিকায় পাকাপাকি ভাবে বসবাস করার ছাড়পত্র বা গ্রিন কার্ড পান না অপেক্ষা তালিকার অনেক পিছনে থাকা মানুষ।

তবে ট্রাম্পের গ্রিন কার্ড নীতি সফল হলে আমেরিকার উচ্চ শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য বদল আসতে পারে। আন্তর্জাতিক পড়ুয়ারা আকর্ষিত হলে পড়াশোনার ক্ষেত্র, বাসস্থান এবং চাকরির সুযোগেও পরিকাঠামোগত উন্নতি হতে পারে। ট্রাম্পের গ্রিন কার্ড নীতি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা ক্ষেত্রের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আমেরিকা বৃদ্ধি দেখতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২২-’২৩ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় পড়তে যাওয়া বিদেশি পড়ুয়ারা সে দেশের অর্থনীতিতে ৪ হাজার ১০ কোটি ডলারের অবদান রেখেছিল। এখন ট্রাম্পের গ্রিন কার্ড নীতির জন্য আমেরিকায় যদি বিদেশি পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়ে, তা হলে অর্থনীতি আরও ফুলেফেঁপে উঠবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এই নীতি ভিসা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক অনিশ্চয়তার সমাধান করবে বলেও অনেকে মনে করছেন।

পাশাপাশি ট্রাম্পের যুক্তি, গ্রিন কার্ডের অভাবে আমেরিকায় পড়াশোনা করে অনাবাসী পড়ুয়াদের নিজেদের দেশে ফিরে আসতে হয়। আমেরিকা থেকে ফিরে ওই পড়ুয়ারা নিজেদের দেশে চাকরি করে কোটি কোটি আয় করেন। যা তাঁদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটায় এবং ওই দেশগুলিকে ধনী করে। কিন্তু আমেরিকার কোনও লাভ হয় না। তবে গ্রিন কার্ড দেওয়ার পরে ওই পড়়ুয়ারা আমেরিকায় চাকরি করলেও আমেরিকার উন্নতি হবে।

ট্রাম্পের মতে, হার্ভার্ড এবং এমআইটির মতো আমেরিকার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেও অনেক বিদেশি পড়ুয়াকে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হয়। তাই ওই মেধাবী পড়ুয়ারা যাতে আমেরিকাতেই স্থায়ী ভাবে থেকে যেতে পারেন, সেই কারণেই তিনি নতুন গ্রিন কার্ড নীতি চালু করতে চান।  

দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য গ্রিন কার্ড নীতিতে বদল আনার ট্রাম্পের যে পরিকল্পনা, তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর হয়ে ভোট টানতে পারে বলেও জানাচ্ছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীনই গ্রিন কার্ড নীতিতে বদল এসেছিল। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় থমকে গিয়েছিল গ্রিন কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া। গ্রিন কার্ডের লক্ষ লক্ষ আবেদন ছাড়পত্র না পেয়ে জমতে থাকে। ক্ষমতায় আসার পরই আমেরিকার অভিবাসন আইনে আমূল সংস্কার করতে উদ্যোগী হন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ‘পুরনো ভুল’ শুধরে নিতে চাইছেন বলেই মনে করছেন কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। সূত্র: আনন্দবাজার


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম - dainik shiksha ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান - dainik shiksha জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি - dainik shiksha কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের - dainik shiksha কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক - dainik shiksha আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050539970397949