আর ঘৃণা নয়

রাজু আহমেদ |

প্রিয় ভাই ও বোনেরা প্রতিশোধ ভুলে যান। কোনো অপরাধ বা ভুলের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণে সংকীর্ণ প্রাপ্তি ঘটে। যদি ক্ষমা করতে পারেন, তবে তার মহত্ত্ব বিস্তীর্ণ। যদি আপনাকে অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানি করা হয়, তবে আইনের কাছে ন্যায্যতা দাবি করেন। আজ সুযোগ পেয়ে কারো ওপর প্রতিশোধ নিতে চড়াও হলে তার রেশ ভবিষ্যতেও থেকে যাবে। যারা ভুল করেছে তাদের বুঝিয়ে দিতে যদি অনুরূপ ভুলের পুনরাবৃত্তি করি তবে আশরাফ আর আতরাফে পার্থক্য থাকলো কোথায়? কোনো দলের অন্ধ সমর্থকের চেয়ে মানবিকতার মানুষ হয়ে ওঠা জরুরি। প্রতিহিংসা দিয়ে নয় বরং ভালোবাসে, আগলে রেখে এবং সমতা নিশ্চিত করে যাতে সামনের দিনগুলোতে মিলিত হই। ভুল করলে ঘৃণা কতোখানি বাড়ে, মানুষ কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে এবং কতো গভীর উত্তাপ ছড়ায়-তার সবখানি দৃষ্টান্ত বোধহয় গত কয়েকদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্পদ ধ্বংস করে, কাউকে পুড়িয়ে/গুলি করে মেরে কিংবা অকথ্য নির্যাতনের পরে পেট ভরে ভাত খাওয়ালে, নরম বিছানায় শোওয়ালে এবং গতিময় যানবাহনে চড়ালেও তার শোধ পূর্ণ হয় না বরং ক্ষোভ বাড়ে। কাজেই ভবিষ্যতে জন্য যারাই যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা ভেবে নিয়েন। যতোটুকু পারেন জনতার ভালোবাসার কামাইয়ের চেষ্টা করবেন; ভুলেও এক ফোঁটা ঘৃণা নয়। ঘৃণা জমতে জমতে যখন গণবিস্ফোরণ ঘটে তখন অস্তিত্বই বিলুপ্ত করে দেয়।

কারো ওপর অন্যায্যভাবে চড়াও হলে, অধিকার কেড়ে নিলে কিংবা জনসম্পদ লুটপাট করলে কেমন পরিণতি ঘটে তা নতুন করে বলার নেই। পতনের জ্বাজ্জল্যমান দৃষ্টান্ত সবার সামনে। অতীতের ভুলগুলো থেকে, ক্ষতগুলো দেখে যাতে সবাই শিক্ষা গ্রহণ করে। পাঁচ কিংবা পঁচিশ বছর বাদে আবার মূল্যায়নের আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে পাঁচ মাসেও পতন হতে পারে। তখন যাতে বিদায়ের জন্য আসিটুকু বলার ফুসরত থাকে। যে বিদায় নেবে তারচেয়ে যাতে যে বিদায় দেবে সে বেশি কাঁদে। অতীত দেখিয়েছে, আমরা ক্ষমতা পেলে কর্তব্য ভুলে যাই। লাভের নামে লোভে ডুবি। গণধিকৃত হতে হতে রাষ্ট্র ছাড়া হতে হয়। ভবিষ্যৎ শাসকদের সাবধান হওয়া ও শিক্ষা নেয়া জরুরি। সব নীতিকথা ভুলে আবার যদি অতীতের অপশাসন আগতদের মস্তিষ্কেও চাপে তবে জনতার চেয়ে ক্ষমতা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনতার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে ক্ষমতায় থাকাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আলোচনায় সমাধান মেলে না এমন কোনো সমস্যা নাই। অহমিকা, জেদ কিংবা গোঁয়ার্তুমিতে যাতে তরী না ডোবে। নতুন সূর্যের অপার সম্ভাবনা যাতে লুটপাট না হয়। দুর্বৃত্তায়নের ফলে যা কিছু ভালো তা ধ্বংস না হোক। শহীদ সাঈদ কিংবা মুগ্ধ এবং আরো অগনিত তরুণ-যাদের জীবনের বিনিময়ে মুক্তি, সেই শোক শক্তি হয়ে রাষ্ট্রের হাল শক্ত করে ধরুক। জনতার রায়ে যারাই শাসনে আসবে তারা আর কোনোদিন স্বৈরাচার হয়ে না উঠুক।

কোনো অর্জনের কৃতিত্বে আমি নয় বরং আমরা কিংবা কোনো অধিকারে আমার নয় বরং আমাদের-এই শপথে চলতে পারলে দেশটা সোনার দেশ হয়ে উঠবে। আমি কিংবা আমিত্ব- ভয়ানক খারাপ শব্দ/ব্যাপার। দাঁড়ি টুপি দেখলেই জঙ্গি না ভেবে কিংবা সংখ্যালঘু পেলেই চেপে না ধরে যদি সমতায় চলি, সর্বত্র সাম্য এবং মানবিকতা রাখি তবে সোনার দেশ গড়া যাবে। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সোনার দেশে বৈষম্যের আঁচড়ে কোনোভাবেই লাগতে দেয়া যাবে না। আর কোনো অশুভ শক্তি যাতে ক্ষমতায় খুঁটি গাড়তে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।  নয়তো স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যাবে। তিপ্পান্ন বছরে কম জঞ্জাল জমেনি। তারুণ্যের শক্তিতে এবার সেসব সাফ হবে-আশায় বুক বেঁধেছি। যদি অতীত আমাদের শেখাতে পারে তবে এক পয়সা ঘুষ, কাউকে দমন-পীড়ন কিংবা ঘৃণা কামাইয়ের মতো বোকামিতে আর ভবিষ্যৎ জড়াবে না। অবিচার ও অন্যায্যের ময়লা চিন্তা ও কাজে লাগানো উচিত হবে না। তবে যদি প্রতিহিংসা মাথাচাড়া দেয়, অতীতের দলান্ধের ভাবধারা বজায় থাকে তবে আবারো পালাতে হবে। এমনও হতে পারে, পালানোর জন্য তখন কোনো দেশে ঠাঁই পাওয়া যাবে না। এক আকাশ ঘৃণা কুড়াতে হবে। এই যে বাড়াবাড়ি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিনাশ, লুটতরাজ কিংবা নির্যাতন-এসবও ইতিহাসের দলিল হবে। এমন মহৎ অর্জনকে অল্পতেই বিনষ্ট হতে দেয়াটা বোকামি হবে। আমাদের উত্তরাধিকারী প্রজন্মের সামনে যাতে মুখ লুকাতে না হয়। এই বাংলাদেশ আমাদের। ভুল থেকে শিখে যাতে আগামী দিনের স্বপ্ন সাজাই। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে হোক।

যেখানে সম্ভাবনা প্রকট তার উল্টোপাশেই শঙ্কা প্রবল। ভালোবাসার বদলে ভয় নয়, শাসনের নামে শোষন নয় কিংবা ক্ষমতার বদলে ঘৃণা যেনো আর না জমে। যে তরুণরা জিতিয়েছে তারা উদ্দেশে পৌঁছানোর আগেই যাতে হেরে না যায়। খোলা চোখে চারদিকে সচেতন দৃষ্টি পড়ুক। ঘৃণা নিয়েও কিছুদিন থাকা যায় কিন্তু টেকা যায় না-এই সত্য যাতে কারো বিস্মরণ না হয়। সুদিন সমাগত হলে তবেই এই জয় জনতার। ইচ্ছাকৃত কিংবা লোভ-মোহের ভোগে অনুশোচনা এলে তবে আত্মহত্যা শ্রেয় হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনা, সংখ্যালঘু এবং তাদের সম্পদ, ধর্মীয় উপাসনালয়, ভিনদেশি এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ-এসবে কারো প্রভাব ও কারো কুমন্ত্রণায় কোনো ধ্বংসযজ্ঞে মাতবেন না। মনে রাখতে হবে, ভুলের ফয়সালায় আবার ভুল করলে সেটারও খেসারত দিতে হয়। হিংসাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চরমভাবে নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। সময় আবর্তিত হতেই থাকে। সুদিন দুর্দিনে বদলে যায় আবার দুর্দিন সুদিন নিয়ে আসে-দু’দিনের ব্যবধানে। যে তারুণ্য পরিবর্তন এনেছে তাদের নিন্দা হতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কোনভাবেই করা যাবে না। নতুন বাংলাদেশের সূচনা হোক। তারুণ্যের শক্তি হোক অগ্রনায়ক। দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী এবং ঘুষখোরের ঠাঁই সোনার দেশের মানচিত্রে আর না হোক। প্রতিহিংসা কিংবা জিঘাংসা কোনো মহৎ উদ্দেশের অনুবর্তিকা নয়।

ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেয়ে কিংবা ক্ষমতায় যেয়ে যারা অন্যায় করবে তারা যেন ছাত্রসমাজের মুখগুলো মনে রাখে। অন্যায়ের প্রতিবাদ কখনোই থামে না বরং দ্রোহ নিয়ে সামনে বাড়ে। কোনো রাষ্ট্রীয় সেবা দেয়ার নামে একপয়সা ঘুষ চাওয়ার আগে ছাত্র-জনতার শক্তি যেনো মনে পড়ে। এই দেশের অদ্ভূতুরে নিয়মকানুন সংস্কার করার এইতো মোক্ষম সময়। জাতির সামনে শুধরে যাওয়ার/দেয়ার এবং নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ। শাসক যাতে দাম্ভিক হয়ে না ওঠে, কেউ যাতে ক্ষমা আঁকড়ে থাকতে না চায় কিংবা না পারে তার সুব্যবস্থা করতে হবে। তারুণ্য যে দেশের নেতৃত্ব দেয় সে দেশ পথ হারবে না বলেই বিশ্বাস। এরপরেও যদি পচন ধরে তবে আর কোনো আশা বাকি থাকবে না। আমাদের জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠুক; কেবল কাগজ কলমের সোনার দেশ নয় বরং শাসক-শাসিতের বৈষম্যমুক্ত বাস্তবিক স্বপ্নের বাংলাদেশ। বিশ্ববাসীর কাছে এক নতুন বাংলাদেশের পরিচয় ঘটবে সেই আশাবাদে বুক বেঁধেছি। বুক ভাঙার ব্যথা আর যেনো সহ্য করতে না হয়। অতীত আমাদের যা শিখিয়েছে তার থেকে ভালোটুকু নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে এবং আলো আসবে-এমটাই জনতার প্রত্যশা। আশা নয় বিশ্বাস- এবারে নিরাশার কিছু ঘটবে না। ঘটতে চাইলেও আর ঘটতে দেয়া যাবে না। পরবর্তী শাসকদের ভবিষ্যৎ যাতে স্বর্ণাক্ষরে লিখতে পারি- সেই সৌভাগ্য হোক জাতির।

লেখক: কলামিস্ট 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের - dainik shiksha হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027480125427246