নাটোরের গুরুদাসপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেয়ার নামে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে টাকা নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম। কিন্তু ঘর না পেয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে চাপে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত ওই নেতার নেয়া ঘুষের টাকা ইউএনও শ্রাবণী রায়ের মাধ্যমে ফিরে পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
শুক্রবার (৫ মে) সকালে সাতজন অভিযোগকারীকে তার বাসভবনে ডেকে ওই টাকা ফেরত দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযোগকারী আসমা বেগম, ইঞ্জিরা বেগম, রাবিয়া বেগম, রিজিয়া বেগম, হাবিয়া বেগম, সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমকে ইউএনও তার বাসভবনে ডেকে নেন। সেখানে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে অভিযোগকারীদের সাথে বৈঠক করেন ইউএনও।
এদিকে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ইউএনওর বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সংবাদকর্মীরা এ বিষয়ে জানতে শ্রাবনী রায়ের সাথে কথা বলতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি তার মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ধরেননি।
পরে বেলা ২টার দিকে ঘুষের টাকাসহ তার বাসভবনের পেছনের সীমানা প্রাচীরে মই বেঁধে সেখান দিয়ে নামিয়ে দেয়া হয় ভুক্তভোগী নারীদের।
এদিকে ঘুষের টাকা ফেরত পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে গুরুদাসপুর থানা মোড়ে সংবাদকর্মীদের সাথে কথা হয় অভিযোগকারী নারীদের। তারা জানান, ইউএনও শ্রাবনী রায় বৃহস্পতিবার রাতে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য মুঠোফোনে শুক্রবার তার সরকারি বাসভবনে আসতে বলেছিলেন। সেই কথা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা আসলে, সেখানে বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে সাত জনের মধ্যে চার জনকে ৫০ হাজার করে এবং একজনকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের পর টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও। পরে ফেরত পাওয়া টাকার বান্ডিল সংবাদকর্মীদের দেখান অভিযোগকারী নারীরা।
ভুক্তভোগী নারীরা জানান, গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছিলেন। এই ঘুষের টাকা ফেরত পেতে গত বুধবার সাহারা খাতুন ও মমতাজ বেগম বাদী হয়ে নাটোর আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও জেলা প্রশাসকের নজরে আসে।
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহম্মদ মাসুম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে অভিযোগকারীদের শুনানি গ্রহণ করেন। এসময় অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না।
এ শুনানিতে ইউএনও শ্রাবনী রায় ছাড়াও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগীদের শুনানি গ্রহনের একদিন পরই শুক্রবার ইউএনও শ্রাবনী রায় ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন অভিযোগকারী নারীদের।
ভুক্তভোগী ওই নারীরা জানান, শুনানি গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে এসেছেন এবং তাদের টাকা ইউএনওর মাধ্যমে ফেরত পাবেন বলেও জানিয়েছিলেন। তার কথা ও ইউএনওর ফোনে আশ্বস্ত হয়ে শুক্রবার ইউএনওর বাসভবনে এসে টাকা ফেরত পেয়েছেন তারা।
সীমানা প্রাচীর টপকে পার হওয়া নারীদের মধ্যে আসমা বেগম সংবাদকর্মীদের জানান, সাংবাদিকদের চোখ এড়াতে ইউএনওর পরামর্শে তার গাড়ি চালক জয়নাল হোসেনের সহায়তায় টাকাসহ মই বেয়ে প্রাচীর অতিক্রম করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা নজরুল ইসলাম কোন কথা বলতে চাননি।