ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে একসময়ের দুর্দান্ত ও প্রতাপশালী সংসদ সদস্য (এমপি) এনামুল হক জজ মিয়া। যার নির্দেশই বাস্তবায়ন হতো এ জনপদে। নিস্বার্থভাবে বহু মানুষকে চাকরি দেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সময়ের আবর্তে প্রভাব-প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেলেন এই বর্ষীয়ান নেতা। তিন বেলা ঠিকমতো খাবারও জোটেনি। মানবেতর জীবন যাপন করছিলেনতৃতীয় স্ত্রী ও এক ছেলেসন্তান নিয়ে। পরে ঠায় হয় উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেন। ৮২ বছর বয়সে বুধবার (১১ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেই তার মৃত্যু হয়।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা এনামুল হক জজ মিয়া ১৯৭২ সালে জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পালিত মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। জাতীয় পার্টির শাসনামলে এরশাদ জজ মিয়াকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ দুই মেয়াদে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও তার ব্যক্তিজীবন মোটেও গোছানো ছিল না। একসময় প্রথম স্ত্রী তার কাছ থেকে সহায়-সম্পত্তি লিখে নিয়ে এক মেয়েকে নিয়ে চলে যান আমেরিকায়। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা হকের সঙ্গেও তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ঢাকার পুরানা পল্টন ও মিরপুরের কাজীপাড়ায় তার বিশাল দুটি বাড়ি দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই সন্তানদের লিখে দেন। স্থানীয়ভাবে যে সম্পত্তি ছিল তা-ও বিক্রি করে দেন তিনি। সর্বশেষে ১২ শতাংশ জমি একটি মসজিদের নামে লিখে দিয়ে নিঃস্ব হন তিনি।
এরপর তৃতীয় স্ত্রী রুমা ও নয় বছরের ছেলে নুরে এলাহীকে নিয়ে আয়-উপার্জন না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে নানান রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসার জন্য অনেকের কাছেই সহায়তা প্রার্থনা করেন। ভালো করে চিকিৎসাও করাতে পারেরনি একসময়ের দুপুটে এই নেতা। এমনই এক পরিস্থিতিতে তার জীবন অবসান হয়।