আসাদের মৃত্যু ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানে কেমন প্রভাব ফেলেছিল?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদের মৃত্যুর ৫০ বছর পূরণ হচ্ছে আজ। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়। এরপর নানা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।

কে ছিলেন এই শহীদ আসাদ? আর তাঁর মৃত্যু তখনকার আন্দোলনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিলো?

সে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তৎকালীন শ্রমিক আন্দোলনের সাথে জড়িত কমিউনিস্ট নেতা হায়দার আকবর খান রনো জানান," আসাদ ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ বিপ্লবী নেতা। তিনি একাধারে যেমন ছাত্র আন্দোলন করতেন তেমনি কৃষক আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।"

"১৯৬৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর মওলানা ভাষানী যে হাট হরতালের ডাক দিয়েছিলেন। নিজ বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদি থেকে সেই হাট হরতালে অংশগ্রহণ করেছিলেন আসাদ। এবং এ কারণে তিনি পুলিশ হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহতও হয়েছিলেন।" 

"পরে তিনি মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই ঢাকায় এই খবরটি দিতে আসেন। তার কিছুদিন পরেই নিজে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসলেন। " 

১৯৬৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র সংগঠনের নেতারা। সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আসাদ।
পরে ১৭ই জানুয়ারি ছাত্রনেতারা দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য ১৪৪ ধারা আইন জারি করেন।

তার তিনদিন পরই ২০ জানুয়ারি আসাদ গুলিবিদ্ধ হন বলে জানান হায়দার আকবর খান রনো। সেই সময় দৈনিক পাকিস্তানে নির্মল সেন লিখেছিলেন, "আসাদ এসেছিল খবর দিতে, আর আসাদ আজকে এলো খবর হয়ে"।

মিস্টার রনো জানান, সেদিন দুপুরে আসাদ, ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পাশে চাঁনখাঁ'র পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে। এরপরও বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে গুলি করে।আসাদ সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

আসাদের এই মৃত্যুর খবর পেয়েই তার সহযোদ্ধারা সেদিন তার কাছে ছুটে যান। তাদের জানানো হয় যে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার কারণে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। মিছিলের প্রথম সারিতেই তিনি ছিলেন। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আসাদের এই মৃত্যুর খবর দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্দোলনের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তোলে বলে জানান মিস্টার রনো। শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা দাবির স্বপক্ষে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামীদের মুক্তি দাবির যে আন্দোলন চলছিল সে অবস্থায় আসাদের মৃত্যু সবাইকে নাড়িয়ে দেয়। যা পরবর্তীতে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে তরান্বিত করে।

মিস্টার রনো বলেন, " আসাদের মতো বিপ্লবী ছাত্রনেতাকে হত্যার ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই দেশজুড়ে একটি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং আন্দোলন একটি অন্য স্তরে উন্নীত হয়। যার ফলস্বরূপ ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের সরকার দু'মাসের জন্য ১৪৪-ধারা আইনপ্রয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। সেইসঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার।"

এদিকে আসাদের মৃত্যু ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানকে শুরু করার ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করেন তিনি। আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা দাবিতে সেই গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আইয়ুব খানের। এরপরই স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

মিস্টার রনোর মতে, এ ঘটনার পর গোটা পূর্ব বাংলায় তখন জনগণের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। সমস্ত প্রশাসন পুরোপুরি ধসে পড়ে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বিচ্ছেদের ব্যাপারটি অনিবার্য হয়ে ওঠে। তারপর ইয়াহিয়ার খান পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও তার ফলাফল কেউ গ্রহণ করেনি। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়।

বাংলাদেশের এই মুক্তি সংগ্রামের পেছনে শহীদ আসাদের ভূমিকা একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন হায়দার আকবর আলী খান রনো।

আসাদের মৃত্যুকে ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আসাদের মৃত্যু গোটা জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছিল এজন্য তার মৃত্যুর ৫০ বছর পরও আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।"

 

সৌজন্য: বিবিসি বাংলা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025680065155029