ইংরেজিভীতির জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নিজেদের উন্নত করতে আজ আমরা অনেক বেশি উঠেপড়ে লেগেছি। এরই হাত ধরে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনেক ধারাই নিজেদের সংস্কৃতির আওতায় এনেছি বা আনার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু পশ্চিমাদের মতো ইংরেজি ভাষাটাকে আমরা এখনো আয়ত্ত করতে পারিনি। কিন্তু কেন?

ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়ায় সারা বিশ্বে এর ব্যবহার। আমরা বাঙালি জাতিও তা উপেক্ষা করতে পারি না, পারবও না। কারণ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ইংরেজি শিক্ষা আবশ্যক। বর্তমানে ইংরেজির কদর সবখানে। বহির্বিশ্বের কথা আমরা ছেড়েই দিই, নিজেদের দেশের কথা বিবেচনা করলেই দেখতে পাব ইংরেজির কদর কত বেশি। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

 নিবন্ধে আরও জানা যায় ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারা, যোগাযোগ করতে পারা ছাড়া বর্তমানে কিছুই হয় না। সব কাজে এখন ইংরেজি ভাষা ব্যবহূত হয়, চাকরিক্ষেত্রে এই যোগ্যতা আরো বেশি দেখা দেয় এবং বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে এসে এটা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

তবে দুশ্চিন্তার বিষয় অন্য জায়গায়। আজও আমাদের মনে এত ইংরেজিভীতি কেন? যেখানে জন্মের পর থেকেই শুরু হয় এই ভাষা শিক্ষা, যেখানে ছাত্রজীবনের সব ক্ষেত্রেই আমরা ইংরেজি শিখি, তবুও ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কেন ইংরেজিতে কথোপকথন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না, কেন তাদের মনে ভয় কাজ করে, কেন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে—যখন তাকে ইংরেজিতে কথোপকথন চালিয়ে যেতে বলা হয়, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজি অনেক ভালো পড়তে বা শুনে তার অর্থ বুঝতে পারলেও তত্ক্ষণাত্ সে নিজে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না। কিন্তু শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে প্রায় ১৪/১৫ বছর ইংরেজি ভাষার সান্নিধ্যে থেকেও কেন এই ভীতি, এর শেষ কোথায়?

আমি এই ইংরেজিভীতির জন্য দায়ী করব আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে। নিজে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এবং আমার মতো আরো অনেক শিক্ষার্থীর চিন্তার আলোকে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার পর, যখন আমরা ইংরেজি পড়তে শিখে যাই, উচ্চারণ শিখে যাই তারপর মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এই সাতটি বছর আমাদের যে গ্রামাটিক্যাল রুলস শেখানো হয়, তার বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। ইংরেজির ওপর এত খুঁটিনাটি শিক্ষার্থীদের না শিখিয়ে যদি স্কুল-কলেজে ইংরেজি বই পড়ার অভ্যাস করত, যদি স্পিকিং প্র্যাকটিস করাত, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রেজেন্টেশন থেকে শুরু করে যে কোনো চাকরির ভাইভাতে এই ইংরেজিভীতি কাজ করত না। একই বিষয়ের ওপর বাংলা আর ইংরেজি দুই ভাষায় কিছু বলতে এত ভয় কাজ করত না।

আমাদের স্কুল-কলেজগুলোতে ইংরেজির গ্রামাটিক্যাল দিকে এতটায় গুরুত্ব দেয়, যা আমাদের ভাষা শিক্ষার প্রতি ভীতির সৃষ্টি করে, পরবর্তী সময়ে এই ভীতি আমাদের ইংরেজি বলতে না পারার কারণ হয়ে ওঠে।

ইংলিশ মিডিয়াম বা ইংরেজি ভার্শনে পড়া ছেলেমেয়ে ছাড়া খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী দেখা যায়, যারা স্বচ্ছন্দভাবে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এরই মধ্যে শিক্ষার মানোন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। এই বিষয়টিও তার বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। ইংরেজি ছাড়া আজ আমরা অচল, আর তা অবশ্যই কমিউনিকেটিভ ইংলিশ, যেন আমরা সহজেই ইংরেজি বলতে পারি এবং যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি। কিন্তু গ্রামাটিক্যাল রুলসের মাত্রা অতিরিক্ত ভুলত্রুটির বিচারে যেন ভাষাটা ভয়ের কারণ না হয়, সেদিক বিবেচনার এখনই সময়।

লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042979717254639