ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। দশম পর্ব

মাছুম বিল্লাহ |

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের সিলেবাসে কমিউনিকেটিভ ইংলিশ চালু করা হয় এই উদ্দেশ্যে যে, গ্রামার ট্রান্সলেশন মেথড শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী ইংরেজি শেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাদের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে, যাতে তারা সহজেই একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মেকাবিলা করতে পারে। গ্রামার ট্রান্সলেশন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়। ক্লাস চলাকালীন তাদের নীরব ভূমিকা পালন করতে হতো এবং শুধুমাত্র লেখার ক্ষেত্রে তারা কিছুটা সক্রিয় থাকত। সেটাও সীমাবদ্ধ ছিল তাদের গ্রামার লেখা নিয়ে। এভাবে পাঠদানের অধিকাংশ সময়ই তারা নিষ্ক্রিয় থাকত বলে কমিউনিকেশনের দক্ষতা তাদের বৃদ্ধি পেত না। শিক্ষক শুধু লেকচার দিতেন আর দু’ একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র দুই একটি প্রশ্ন শিক্ষকদের করত, এছাড়া তেমন কোনো সক্রিয় অংশগ্রহণ তাদের ছিল না। যে ক্লাস যত বেশি নীরব থাকত শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী এবং অন্যান্যরা ভাবতেন যে, সেই ক্লাস তত ভালো হয়েছে। কারণ ক্লাসে কোনো হৈ চৈ নেই, শব্দ হয়নি। এভাবে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যে ব্যবধান সৃষ্টি হতো তা তাদের সহপাঠীদের সাথে দক্ষতার ব্যবধান সৃষ্টি করত।

কমিউনিকেটিভ ইংলিশ সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ দেয়। কারণ শিক্ষার্থীদের ভাষা ব্যবহার করতে হবে ক্লাসে, তবেই তারা ইংরেজি শিখবে। আর এটি করতে গিয়ে ক্লাসে কথোপকথন হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে, প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয় এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়, কোনো বিষয়ে মতামত প্রকাশ করা হয় অর্থাৎ ক্লাসে হৈ চৈ হয়, শব্দ হয়। তখন স্কুল অথরিটি এবং কমিউনিকেটিভ ইংলিশ সম্পর্কে যেসব শিক্ষকদের ধারণা নেই তারা এটিকে গোলমেলে ক্লাস বলে থাকেন। ব্যাপারটি আসলে গোলমাল করা নয়। 

কমিউনিকেটিভ ল্যাংগুয়েজ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র রিডিং এবং লিসেনিং-এর মতো রিসেপটিভ দক্ষতাই অর্জন করবে না, তারা প্রোডাক্টিভ স্কিল যেমন- স্পিকিং ও রাইটিং স্কিলও অর্জন করবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে হচ্ছে কী? তারা কি বাস্তবজীবনে কমিউনিকেশনের দক্ষতা অর্জন করছে? কমিউনিকেটিভ ল্যাংগুয়েজ টিচিংএ শিক্ষকের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখা, যার মাধ্যমে তারা যোগাযোগের দক্ষতা অর্জন করবে ক্লাসরুমে এবং ক্লাসরুমের বাইরে। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে এমন সব কার্যাবলীর অবতারণা করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তবজীবনে কমিউনিকেশনের সুযোগ পায়। একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে কথা বলে, অন্যভাবে কমিউনিকেট করে এবং ইংরেজির চারটি স্কিল সমহারে ব্যবহার করে।

ধরে নেয়া হয় যে, কমিউনিকেটিভ ইংলিশ ক্লাসে শিক্ষক সবসময় শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখবেন, ব্যস্ত রাখবেন, নিজে ইংরেজি বলবেন, শিক্ষার্থীদের বলাবেন। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বিষয়টি দেখা যায়  অনেকটাই বাস্তব থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। কারণ একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি ক্লাস নিতে হয় এবং শুধু ইংরেজি ক্লাস নয়, অন্যান্য বিষয়ের ক্লাসও নিতে হয়। স্বভাবতই তার মন মানসিকতা এমনিতেই একটু বিরক্ত থাকে। ফলে অনেকের পক্ষেই খুব মজা করে ইংরেজি ক্লাস পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, অনেক ইংরেজি শিক্ষকের পক্ষেই ইংরেজি বলা বা শুদ্ধ করে লেখা সম্ভব হয় না। কারণ শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েশন লেভেলে ১০০ বা ৩০০ নম্বরের ইংরেজি পড়লে ইংরেজির ভিত মজবুত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ইংরেজিতে যারা অনার্স পড়েন তারা সবাই মাধ্যমিক শিক্ষকতায় এখনও সেভাবে আসছেন না, আবার যারা আসছেন তাদের মধ্যে সবাই যে ফ্লুয়েন্ট ইংরেজি বলতে পারেন ব্যাপারটি এমনও নয়।

ক্লাস খুব ফলপ্রসূ হবে, শিক্ষক ক্লাসকে আনন্দময় ও ফলপ্রসূ করবেন এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়ে ‘ইংলিশ ফর টু ডে’ লেখা হয়েছে। কিন্তু এখানে এমন কোনো মজার গল্প নেই যে, শিক্ষার্থীরা মজা পাওয়ার আশায় গল্পটি পড়বে এবং ইংরেজি শিখবে কিংবা কোনো টিচার ব্যস্ত থাকলেও একটু মজা দিতে পারবেন ক্লাসে। পুরোটাই টিচারকে বানাতে হবে যদি কোনো মজা দিতে হয়, যেটি বাস্তবে অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। আর তাই শিক্ষার্থীদের অবস্থার উন্নতি তো হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রে আরও পেছনে চলে গেছে। তারা ক্রিয়া ছাড়া বাক্য তৈরি করছে, কোথায় কোনো ক্রিয়া বা সাবজেক্ট/অবজেক্ট ব্যবহার করতে হবে তা তারা জানছে না এবং অনেক ক্ষেত্রে জানার আগ্রহও দেখাচ্ছে না।
চলবে......

লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত

 

 

আরও পড়ুন:

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। নবম পর্ব

 ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। অষ্টম পর্ব

 ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। সপ্তম পর্ব

 ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। ষষ্ঠ পর্ব

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। পঞ্চম পর্ব

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। চতুর্থ পর্ব

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। তৃতীয় পর্ব

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। দ্বিতীয় পর্ব

ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। প্রথম পর্ব


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010401010513306