ইংরেজির চারটি দক্ষতার মধ্যে স্পোকেন ইংলিশ অন্যতম একটি দক্ষতা। যে কোনো অফিস, বেসরকারি সংস্থা এনজিওতে চাকরি পাওয়ার জন্য স্পোকেন ইংলিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। আসলেই এটি একটি প্রশংসনীয় গুণ। যিনি সুন্দরভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তার কদর এবং চাহিদা প্রায় সর্বত্রই। এই সুবাদে দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে ইংরেজি শেখানোর কোচিং সেন্টার। বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা প্রার্থীদের প্রলোভিত করার চেষ্টা করে। কেউ কেউ বলেন, ‘দ্বিতীয় ঘণ্টা থেকে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলুন। আবার কেউ কেউ বলেন ‘দুই সপ্তাহে ইংরেজিতে কথা বলা শিখুন।’ আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে ইংরেজি পড়ছে, তার পরেও তারা ইংরেজিতে দুর্বল থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব কোচিং সেন্টারগুলো কীভাবে দু’ ঘণ্টায় কিংবা দু’ সপ্তাহে ইংরেজি বলার নিশ্চয়তা দেয়?
আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। ষষ্ঠ পর্ব
কেন বাড়াতে হবে রিডিং স্কিল
শিক্ষার্থীর জীবনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পড়ার ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষার্থীরা যদি বিভিন্ন ধরনের ম্যাটেরিয়ালস না পড়ে তাহলে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক স্কিল অর্জন থেকে দূরে থাকবে। পড়ার মাধ্যমে তারা তাদের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে পারে। পড়া বিভিন্ন বিষয়ে হতে পারে। যেমনÑ গণিত, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও ভূগোল প্রভৃতি। পড়ার মাধ্যমে এসব বিষয় সম্পর্কে জানার দ্বার উন্মোচন হয়। পড়–য়ারা এসব বিষয়ে সহজেই সাফল্য অর্জন করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে- ছোট সময় থেকেই পড়ার অভ্যাস মানুষকে অনেক বেশি পজিটিভ বিষয় দান করে, তাই ছোট সময় থেকেই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে আর এ বিষয়টি খেয়াল রাখবেন অভিভাবক ও শিক্ষকগণ ।
আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। পঞ্চম পর্ব
বইয়ের পাতায় ডুবে থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অথচ সহজতম আনন্দের উপায়। বই আপনার কল্পনাকে এমনভাবে ব্যস্ত ও নিয়োজিত রাখে যা কোনো মুভিও পারে না। গল্পের বই হলো লেখকের কথার সাথে আপনার নিজের ইমেজকে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। বিশেষ এক ধরনের অনুভূতির জন্ম হবে আপনার মধ্যে। আপনি নতুন পৃষ্ঠায় যাবেন, নতুন কিছু আবিষ্কার করবেন। অর্থাৎ বই পড়া মানে অনেক নতুন নতুন বিষয়ের সাথে পরিচিত হওয়া। আপনি যদি ভালো এবং মনোযোগী পড়–য়া হন, তাহলে আপনি পঠিত বিষয়ের মধ্যে লেখার গাঁথুনি আবিষ্কার করবেন এবং আপনার নিজের লেখায় তা ব্যবহার করতে পারবেন। সেখান থেকে আপনি নতুন নতুন ধারণা খুঁজে পাবেন। সেগুলোর ব্যবহারও খুঁজে পাবেন।
আরও পড়ুন : ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। চতুর্থ পর্ব
উপসংহারে বলা যায়, একজন ভালো পাঠক কোনো লেখার ও লেখকের উদ্দেশ্য আবিষ্কার করতে পারেন এবং নিজের লেখায় তা ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ একজন ভালো পাঠক একজন ভালো লেখক হতে পারেন।
আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। তৃতীয় পর্ব
শিক্ষা গবেষকগণ আবিষ্কার করেছেন যে, পড়া এবং ভোকাবুলারি বাড়ানোর মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যাদের শব্দভা-ার বেশি, বুঝতে হবে তারা ভালো পাঠক। আপনি যদি আপনার শব্দভা-ার বাড়াতে চান, আপনাকে ব্যাপক পড়াশুনা করতে হবে।
শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষক জ্ঞানের উৎস। তার সাথে শিক্ষার্থীর বই পড়া এবং সেখান থেকে আহরিত বিষয় যদি সমন্বয় করেন শ্রেণিকক্ষে, তাহলে জ্ঞান বিনিময়ের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। শুধু পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকলে চলবে না। কারণ তা শিক্ষার্থীদের সব সময় আনন্দ দিতে পারে না আর পরিপূর্ণ জ্ঞানও দান করতে পারে না।
আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। দ্বিতীয় পর্ব
কীভাবে বাড়াতে হবে রিডিং স্কিল
রিডিং স্কিল বাড়ানোর জন্য পড়ার বিকল্প নেই। কী পড়বেন? আপনি যদি শিক্ষক হন তাহলে নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক অনেক বই আপনাকে পড়তে হবে। অনেক অজানা শব্দ হয়ত পাবেন, বারবার পড়–ন, প্রসঙ্গ থেকে অর্থ অনেকটাই বোঝা যাবে। যেগুলো একেবারেই বোঝা যাবে না, অক্সফোর্ড বা অন্য ডিকশনারি থেকে শব্দগুলোর ব্যবহার দেখুন। ডিকশনারিতে সুন্দর করে শব্দের প্রয়োগ ও ব্যবহার দেখানো হয়েছে। আপনার এটিই দরকার। অনেকে ডিকশনারি থেকে শুধু শব্দ মুখস্থ করে এবং শুধু শব্দের বাংলা অর্থ জানার চেষ্টা করেন, এই শব্দ মুখস্থ করা খুব একটা কাজে লাগে না যদি আপনি শব্দের প্রয়োগ না জানেন।
ক্লাসে ইংরেজি পাঠদান করার সময় শিক্ষার্থীদের বারবার পড়তে দিন, তারা চাইবে আপনি তাদেরকে তাড়াতাড়ি বাংলা বলে দিন, তাহলে তারা সহজে বুঝবে। যে সব শিক্ষক সরাসরি বাংলা বলে দিচ্ছেন স্বভাবতই তারা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বেশি প্রিয়। প্রধান শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ সবাই ঐসব শিক্ষকদের বাহবা দিয়ে থাকেন; বলে থাকেন যে ‘অমুক স্যার’ সুন্দর করে ইংরেজি বুঝিয়ে দেন। মনে রাখতে হবে, ভাষা বোঝানোর চেয়ে বুঝতে পারাটাই বেশি গুরত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী। তারা সবার কাছে প্রিয়, কারণ সবাই মনে করে ওই শিক্ষক তাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সবাইকে বুঝতে হবে যে, ভাষা শিক্ষার ক্লাস আলাদা। ভাষা শেখানোর ধরন অন্য ক্লাসের চেয়ে আলাদা। যে ভাষা আপনি নিজে শিখছেন বা শেখাচ্ছেন তা যত বেশি প্র্যাকটিস করা হবে, আলোচনা করা হবে তত ভালোভাবে সে ভাষাটি আয়ত্ব করা যাবে। এই বিষয়গুলো আমাদের সমাজে প্রচলিত নেই বিধায় সবাই মনে করে যেসব শিক্ষক ক্লাসে তাড়াতাড়ি ইংরেজি টেকস্টের বাংলা বলে দেন তারাই আসল শিক্ষক। ব্যাপারটি আসলে তা নয় ।
আরও পড়ুন: ইংরেজি কেন শিখব কীভাবে শিখব ।। প্রথম পর্ব
ইংরেজির কোনো বিষয় শিক্ষার্থীকে বারবার পড়তে হবে, বিষয়ের গভীরে ঢুকতে হবে, কনটেকস্ট থেকে শব্দের অর্থ বোঝার চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষক যদি তাড়াতাড়ি বাংলা বলে দেন তাহলে শিক্ষার্থীর রিজনিং ক্যাপাসিটি হ্রাস পায়, তাদের বিশ্লেষণমূলক ক্ষমতাও হ্রাস পায়। ইংরেজি শেখানোর সময় বাংলা বলে দেওয়াটা যদিও খুব সুখকর মনে হয়, এর মাধ্যমে আসলে শিক্ষার্থীদের স্লোপয়জনিং করা হয়। কারণ শিক্ষার্থীদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও কমপ্রিহেনসিভ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। অথচ শিক্ষার কিংবা ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা যাতে ঐ ভাষা ব্যবহার করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
ইংরেজি পড়ে পড়ে ধীরে ধীরে বুঝতে পারাই হচ্ছে সঠিক ধরনের রিডিং। একটা সময় আসবে যখন তাড়াতাড়ি আপনি বুঝতে পারবেন, আপনার রিজনিং ও আন্ডারস্ট্যান্ডিং পাওয়ার তখন বেড়ে যাবে। আর বাংলা দিয়ে তাড়াতাড়ি শিখতে চাইলে সেই ব্যাপারটি ঘটবে না। আপনি শব্দের প্রয়োগ জানবেন এভাবে পড়লে, আর এভাবে জানলে তা দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারবেন এবং নিজের ব্যবহার করা ইংরেজি শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোকে কি আমরা সব সময়ই পুষব? অবশ্যই না। বরং সবাইকে বোঝাতে হবে যে, ভাষা শিক্ষার ক্লাস আলাদা, ভাষা শেখানোর ধরন আলাদা, শুধু শব্দের অর্থ জানা নয়।
বাংলাদেশের প্রথম দিকে কিংবা পাকিস্তান আমলে বাজারে নোট বই খুব একটা পাওয়া যেত না, এগুলোর ব্যাপক প্রচলন তখন ছিল না। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্যাপাসিটি ছিল প্রখর, তাদের লার্নিং ছিল সলিড। তারা তৃতীয় শ্রেণি পেলেও অনেক ভালো ইংরেজি লিখতেন ও বলতে পারতেন। তাদের বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা ছিল প্রশংসনীয়, বর্তমানে ইংরেজিতে অনার্স পড়–য়া শিক্ষার্থীরা নোট পড়ে সহজেই দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে যান কিন্তুু তাদের বিশ্লেষণধর্মী ক্ষমতা বা ইংরেজি ভাষায় খুব একটা দখল অনেকেরই নেই। আপনার রিডিং স্কিল বাড়াতে হলে অরজিন্যাল ইংরেজি বই বারবার পড়তে হবে। রামজি লাল তিলক পড়ুন, তবে তা ব্যবহার করতে হবে শুধু সহায়ক বই হিসেবে। আসুন আমরা আমাদের রিডিং স্কিল বাড়াই এবং শিক্ষার্থীদেরকেও উৎসাহিত করি এবং প্র্যাকটিস করাই কীভাবে বাড়বে তাদের রিডিং স্কিল। কারণ, এটি ভাষার চারটি স্কিলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল।
চলবে......
লেখক: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত