ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষকে সম্মাননা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

স্বাধীনতার পর দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রতিষ্ঠা করা সহজ ছিল না। সামাজিকভাবে বাঁকা চোখে দেখা হতো এই মাধ্যমকে। এই মনোভাব পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে স্কুলগুলো। মানসম্মত শিক্ষা ও উন্নত পরিবেশ সৃষ্টির কারণে একসময়ের সমালোচকরাই নিজেদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছেন।  

এখন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। 

স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত চারটি বিখ্যাত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন অতিথিরা।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উইংস। অনুষ্ঠানে স্কলাসটিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ইয়াসমিন মোর্শেদ, সানিডেইল স্কুলের অধ্যক্ষ তাজিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়াল (বিআইটি) স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল লুবনা চৌধুরী ও সাউথ ব্রিজ স্কুলের অধ্যক্ষ জিনাত চৌধুরীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

দেশে ইংরেজি মাধ্যমে আধুনিক ও সময়োপযোগী শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা রাখায় এই চার পথিকৃকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। অধ্যক্ষদের উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এ সময় ক্রেস্ট, বই ও অন্যান্য উপহার তুলে দেওয়া হয় তাঁদের হাতে। পরে অধ্যক্ষরা গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ঢাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠায় নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক প্রতিষ্ঠান উইংসের প্রেসিডেন্ট টুটলি রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, একাত্তরের পর নবীন একটি দেশে কিছু মানুষ শিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে তাঁরা ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আজকের দিন পর্যন্ত এই মাধ্যমকে নিয়ে এসেছেন। এখন এ দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়।

স্কলাসটিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ইয়াসমিন মোর্শেদ তাঁর বক্তব্যে জানান, স্বাধীনতার আগেও দেশে ভালো ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ছিল। ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মতো বেসরকারি স্কুল দারুণ ভূমিকা রেখেছে সে সময়। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেল, বলা হলো শুধু বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর জন্য। বাংলা মাধ্যমের সঙ্গে সমন্বয় করতে শিশুদের তখন ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। অনেক অভিভাবক তখন বিদেশে শিক্ষা নিতে পাঠিয়েছেন সন্তানদের। অনেকেই ভারতের দিকে ঝুঁকেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এরপর যখন আমরা কাজ শুরু করলাম, খুব সম্মান পাইনি, যেমনটা আজ পাচ্ছি। তখন আমাদের বলা হতো, আমরা ব্রিটিশ সংস্কৃতি শেখাই। কেউ কেউ টিটকারি করে বলতেন, আমরা ব্রিটিশ জাতীয় সংগীত শেখাই। তারা বুঝতে চান না, ইংরেজি শুধুই একটি ভাষা, আন্তর্জাতিক ভাষা। মজার কথা হলো, যারা আমাদের সমালোচনা করতেন, সেই তাঁরাই একসময়ে তাঁদের সন্তানদের আমাদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। আজ যখন বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তখন এক ভিন্ন দেশ দেখতে পাই। ৪৫ বছর আগে আমরা এই মাধ্যমে কাজ শুরু করেছিলাম। কত চেয়েছি কেউ একজন আমাদের এই অবদানকে স্বীকার করুক, মুখে একবার ধন্যবাদ বলুক।’

সানিডেইল স্কুলের অধ্যক্ষ তাজিন আহমেদ বলেন, বাংলা সংস্কৃতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বুকের ভেতর রেখেই তাঁরা সানিডেইল শুরু করেছিলেন। দেশে-বিদেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার পথ তৈরি করে দেওয়াই ছিল তাঁদের চাওয়া। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমরা বাংলা মাধ্যমের স্কুলই প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কয়েক বছর পর একই স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম শুরু করি।’

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়াল (বিআইটি) স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল লুবনা চৌধুরী বলেন, তখন ইংরেজি মাধ্যমের অনেক শিক্ষকই ছিলেন বাংলা মাধ্যম থেকে আসা। তাঁরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেননি। এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতিই তাঁরা স্কুলে শেখাতেন। তবু শুরুতে সরকারি-বেসরকারি এবং প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ছিল।

সাউথ ব্রিজ স্কুলের অধ্যক্ষ জিনাত চৌধুরী বলেন, তাঁর শিক্ষকতা ভালো লাগত। তবে কখনো স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন, তা ভাবেননি। বিদেশে উচ্চশিক্ষার পর ধানমণ্ডিতে ১৯৮৭-তে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করেন। নিজেকে ঘটনাচক্রে অধ্যক্ষ (বাইচান্স প্রিন্সিপাল) বলে পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হইনি। তবে হ্যাঁ, একটি ভালো স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু উৎসর্গ করতে হয়। সেটা আমাকেও করতে হয়েছে।’

আলোচনা পর্বের পর শিল্পী নাশিদ কামাল দুটি সংগীত পরিবেশন করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে - dainik shiksha স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির - dainik shiksha বিদেশ নির্ভরতা কমাতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার তাগিদ ইউজিসির এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট - dainik shiksha বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের কষ্ট একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন - dainik shiksha একাদশে ভর্তি আবেদন ২৬ মে থেকে ১১ জুন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026350021362305