গাড়িতে ধাক্কা লাগার জেরে বাগেরহাটে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠেছে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে। মিজানুর রহমান নামে ওই নেতা ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। চোখে ও কানে আঘাত পেয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
উপজেলার কাঠালতলা এলাকায় বুধবার সকালে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। থাপ্পড় মারার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও মনোয়ার হোসেন। ভুক্তভোগী মিজানুর রহমানের অভিযোগ, ইউএনও তাকে থাপ্পড় মারার পাশাপাশি গাড়ির পেছনে তুলে আটকে রেখেছিলেন। পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন।
মিজানুর বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার পর তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আহত মিজানুর রহমান ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের দুই বারের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
কাঠালতলা এলাকায় থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, খুলনা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে যাচ্ছিল ইউএনওর গাড়ি। পরে সেটি আবার পেছনের দিকে ফিরে আসতে থাকে। তখন পার্শ্ব রাস্তা থেকে উঠে আসা মিজানুরের মোটরসাইকেলের সঙ্গে গাড়িটির ধাক্কা লাগে।
ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে গাড়ির চালক ও পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে আসেন। ইউএনও মিজানুরকে থাপ্পড় দেন। পরে গাড়ির পেছনে তুলে নিয়ে চলে যান।
জাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, প্রথমে গাড়ি চালক নেমে এসে মিজানুরকে ধমকান। পরে ইউএনও এসে থাপ্পড় দেন।
আহত মিজানুর রহমান বলেন, বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে গরুর খামারের দিকে যাচ্ছিলেন। কাঠালতলা মোড় এলাকায় পৌঁছালে দ্রুত গতিতে ইউএনওর গাড়ি পেছন দিকে আসে। তখন ওই গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। সঙ্গে সঙ্গে ইউএনওর গাড়ির চালক এসে তাকে গাড়িতে উঠতে বলেন। না উঠলে ইউএনও এসে থাপ্পড় মারেন।মিজানুর আরও বলেন, ইউএনও তাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির পেছনে উঠিয়ে গালিগালাজ করেন। গাড়িতে করে কয়েক কিলোমিটার নিয়ে যান। এক পর্যায়ে নামিয়ে দেন।
ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রত্যয় দাস বলেন, মিজানুর রহমান বেশ অসুস্থ্য। মুখ-কান ফোলা থাকায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মিজানুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউএনও মনোয়ার হোসেন বলেন, তাকে কথা বলার জন্য গাড়িতে ওঠানো হয়। পরিচয় জানার পরে ছেড়ে দেন। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউএনওর মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এদিকে উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক জনপ্রতিনিধিকে থাপ্পড় মারার নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। ফকিরহাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খান মোহাম্মাদ আরিফুল হক বলেন, এটা মেনে নেয়া যায় না। ইউএনও যা করেছেন তা চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘনের মতো অপরাধ। ইউএনওকে বহিস্কার করে আইনের আওতায় আনা উচিত।