ইউজিসি বদলে হচ্ছে 'উচ্চ শিক্ষা কমিশন'

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব |

উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করে বিশ্বমানের দক্ষ ও উদ্ভাবন ক্ষমতাসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) 'উচ্চ শিক্ষা কমিশনে' রূপান্তর করছে সরকার। এ লক্ষ্যে উচ্চ শিক্ষা কমিশন আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রোববার (২৬ আগস্ট) সচিবালয়ে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় এটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন হতে পারে। বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সভাপতিত্ব করবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে পাঠক্রমের মানোন্নয়নের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং গবেষণাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ আইনের আলোকে শিক্ষকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম প্রজন্ম গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব চ্যান্সেলরের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে এবং এর স্থায়ী ধারাবাহিকতা থাকবে। কমিশন মামলা করতে পারবে বা কমিশনের বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে।

আইন জারি হওয়ামাত্র 'ইউজিসি' বিলুপ্ত হয়ে 'বাংলাদেশ উচ্চ শিক্ষা কমিশন' প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন। চেয়ারম্যান ছাড়াও একজন পূর্ণকালীন সদস্যসহ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আরও পাঁচজন পূর্ণকালীন সদস্য ও একজন খণ্ডকালীন সদস্যসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা বিভাগের একজন সদস্য এবং অর্থ বিভাগের সচিবকে কমিশনের সদস্য করা হয়েছে। কমিশনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তিনজন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তিনজন উপাচার্যসহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তিনজন ডিনকে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে সদস্য করা হবে।

কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষক, গবেষক বা প্রশাসক হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে অনূ্যন ২০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা শিক্ষাবিদকে কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হবে। চেয়ারম্যান ও পূর্ণকালীন সদস্য চার বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। তবে তারা দ্বিতীয় মেয়াদেও নিয়োগ পেতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (২০১০ খ্রিস্টাব্দের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত) ছয় সদস্য (উপাচার্য) এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে মনোনীত তিনজন ডিন দুই বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন।

চেয়ারম্যান হবেন কমিশনের প্রধান নির্বাহী। সরকার কমিশনের সচিবকে নিয়োগ দেবে। সচিবালয় থাকবে কমিশনের চেয়ারম্যানের অধীনে। সচিবালয়ের সচিব কমিশনের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন বিভাগের প্রধান হবেন। আর অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানদের পদবি হবে পরিচালক। আইনে বছরে পূর্ণ কমিশনের কমপক্ষে তিনটি সভার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

আইনে আরও বলা হয়েছে, কমিশন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা দিতে পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক রেটিংপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রেডিট ট্রান্সফার এবং ছাত্র-শিক্ষক-গবেষক বিনিময় কর্মসূচি নেওয়া হবে। কমিশন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা কার্যক্রমের তদারকি, মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার চাহিদা নিরূপণ, পরিকল্পনা প্রণয়নসহ বিভিন্ন নীতিমালা প্রস্তুত করবে। এ আইনের অধীনে কমিশন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় বাজেট গ্রহণ করবে। কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন তদারক করবে। এ ছাড়া কমিশন শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক, নিয়োগ, ছাত্র-শিক্ষকের আনুপাতিক হার অর্জন, শিক্ষার্থী ভর্তি পদ্ধতি নির্ধারণ, স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষাপত্র মূল্যায়ন ও ফল ঘোষণা এবং এ-সংক্রান্ত কার্যক্রমে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তদন্ত ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেবে। সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা, জেন্ডার সংবেদনশীলতা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক ও আত্মিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও উপকরণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ কমিশন পৃষ্ঠপোষকতা করবে। কমিশন দরিদ্র, মেধাবী এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রার্থীদের বৃত্তি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে এক বা একাধিক ট্রাস্ট তহবিল গঠন ও পরিচালনা করতে পারবে।

সরকারি অনুদান, জনকল্যাণকামী ব্যক্তি-গোষ্ঠী, দাতব্য ট্রাস্ট বা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া দান ও অনুদান, ব্যক্তি, ব্যক্তিগোষ্ঠী, দাতব্য ট্রাস্ট বা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি ঋণ বা দান-সাহায্য বা অনুদানসহ বিভিন্ন ফির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে কমিশনের তহবিল গঠন করা হবে।

সূত্র: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026710033416748