দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় একাধিক মেগা প্রকল্প যুক্ত হলেও বিগত বছরগুলোর মতো এবারও নগরবাসীর পিছু ছাড়েনি রমজানকেন্দ্রিক যানজটের শঙ্কা। উন্নয়নের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু এলাকার মুষ্টিমেয় মানুষ যাতায়াত নিয়ে স্বস্তিতে থাকলেও অধিকাংশের দুঃশ্চিতার কারণ অফিস শেষে ইফতারের আগে বাসায় ফেরা নিয়ে। এক্ষেত্রে মগবাজার, মালিবাগ, গুলিস্তান, মিরপুর রোডসহ অন্তত ১১টি রুট যানবাহনের চাপমুক্ত রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের।
অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলেও বাংলাদেশের পরিবর্তনটা যেন জাদুর কাঠির মতো। স্থবিরতার নিরাশায় ডুবে থাকা নগরবাসীর জীবনে গতিশীলতার হাতছানি একের পর এক মেগা প্রকল্প। আশার প্রদীপ জ্বেলে প্রথমে আসে বৈদ্যুতিক বাহন মেট্রোরেল এরপর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
এটা তো গেল মুদ্রার একটি পিঠ। অন্য পিঠের গল্পের শুরুটা হোক রাজধানীর বাংলামোটর থেকে। বিশেষ করে সকাল ৯টার দিকে এবং বিকেল ৩টার পর থেকেই শুরু হয় বিড়ম্বনা। এক পাশের সড়ক ফাঁকা থাকলেও অন্য তিনটি পাশে থাকে গাড়ির লম্বা সারি। অপেক্ষার প্রহর যেনো কিছুতেই শেষ হওয়ার নয়। অতিষ্ট-অভিশ্রান্ত নগরবাসীর দেহে ভর করে রাজ্যের ক্লান্তি।
দীর্ঘ সময় পর সিগন্যাল নামের জেলখানা ঠিকই ছাড়ে। তবে তাও মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য। অল্প কিছু গাড়ির মুক্তি মিললেও ফের সিগন্যালের জালে আটকা পড়েন আরও অনেকে; আরও অনেক যানবাহন। প্রশ্ন হলো মেগা প্রকল্পগুলোর পরেও সড়কজুড়ে কেন এত যানবাহনের চাপ?
নগারবাসী বলছেন, উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। কিন্তু যানজট কমছে না। রমজানে মেট্রো স্টেশনের আশেপাশে থাকা মানুষজন একটু সুবিধা পাবেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষকেই আগের মতো ভোগান্তিতে পড়তে হবে। মেট্রোরেল আরও কয়েক রুটে চালু করা গেলে হয়ত এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
এমন পরিস্থিতি মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধাপ্রাপ্ত নগরবাসী স্বস্তিতে থাকলেও বড় অংশেরই শঙ্কার কারণ ইফতারের আগে সঠিক সময়ে বাসায় ফেরা নিয়ে।
অনেকে বলছেন, রমজান আসলে আতঙ্ক বেড়ে যায়! অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে ইফতার ব্যবস্থা করাটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাই বাসায় গিয়ে ইফতার করা যাবে কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকে।
আর এক্ষেত্রে সামনে এসেছে অন্তত ১১টি রুট। অনেক গণপরিবহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে না বিধায় যানজটের শঙ্কামুক্ত নয় উত্তরা, খিলক্ষেত কিংবা ফার্মগেট। অন্যদিকে, মিরপুর রোড, মগবাজার, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান এবং সরদঘাট ঘিরেও আছে যানজটের ঘোর অমানিশা। মেট্রোরেলের কানেক্টিভিটি থাকলেও মতিঝিলে গাড়ির চাপ থাকবে অনেক বেশি।
মানুষের এমন শঙ্কার বিষয়টি অজানা নয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও। নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগও। প্রশ্ন হলো পুরনো দাওয়াই কতটা কাজে আসবে যানজটের অভিশাপ নিরসনে? এক্ষেত্রে খাতা কলমের নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগকেই চ্যালেঞ্জ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশেল (ডিএমপি) গুলশান ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমাদের ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে। রমজানের সময়টাতে গাড়ির গতি হয়ত ধীর হবে। ৬০ কিলোমিটার বেগে চালানো যাবে না। তবে অন্তুত ২০ কিলোমিটার বেগে যেন গাড়ি চলতে পারে, সেটা নিয়ে কাজ করছি।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট অ্যান্ড রিচার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন,
একটা করিডোরকে আমরা এমআরটি বা এক্সপ্রেসওয়ের আওতায় আনতে পেরেছি। কিন্তু ঢাকা শহরের একটা বড় অংশ কিন্তু আগের মতোই রয়ে গেছে। তাই এখনো যানজটের আশঙ্কা রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের মনিটরিং গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুন্দরভাবে করতে পারলে যানজটের ভোগান্তি কিছুটা দূর করা সম্ভব হবে।
রাজধানীতে পিক টাইমে যানবাহনের গড় গতি ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। যেখানে মানুষের স্বাভাবিক হাঁটার গতি প্রতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার।