ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১৮ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এতে ঘটনার রাতের কোনো তথ্য-প্রমাণাদি কারও কাছে থাকলে তা লিখিত আকারে বা সশরীরে ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডল ও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির অফিসে তথ্য দিতে বলা হয়। তবে এতে সাড়া মেলেনি।
কমিটির আহ্বায়ক ড. রেবা বলেন, ‘উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তিতে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি।’ ছাত্রীরা জানিয়েছেন, আতঙ্কে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন তারা। ঘটনা বাইরে প্রকাশ না করতে নিয়মিত শাসানোর পাশাপাশি সবসময় নজরবন্দি করে রাখা হচ্ছে। হল প্রশাসন বা তদন্ত কমিটির দেওয়া আশ্বাসে তারা আশ্বস্ত হতে পারেননি। তাছাড়া অহেতুক কেউ ঝামেলায় জড়াতে চান না।
উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া না পাওয়ার কারণ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক প্রভোস্ট প্রফেসর ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘মোটিভেশনের অভাবে হয়তো ছাত্রীরা সিকিউর ফিল করতে পারেনি। এছাড়া আমাদের অধিকাংশ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। সেজন্য এ ঘটনার রেজাল্ট কি হতে পারে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকাতে অনাগ্রহী হতে পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে হয়তো ছাত্রীরা আগ্রহী হতো।’
গণরুমের একাধিক ছাত্রী এবং ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই আতঙ্কে গণরুম ছাড়তে থাকেন ছাত্রীরা। হলে থাকা অভিযুক্ত ও তাদের সহযোগীদের ভয়ে এবং অহেতুক ঝামেলা এড়াতে অনেকেই গণরুম ছেড়ে বাসায় চলে যান। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে দুজন হাইকোর্টের নির্দেশে হল ছাড়লেও বাকিরা এখনো হলেই অবস্থান করছেন। ফলে ছাত্রীরা ভয়ে ফোনে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানান, ‘কেউ কোনো ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাচ্ছে না। যে যতটুকু জানে তাও গোপন করছে, যাতে তার এ ঘটনায় নিজের নাম না জড়ায়।’ দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন, প্রতিনিয়তই তাদের সঙ্গে কথা বলছি, কোনো সমস্যা বা তথ্য থাকলে নির্ভয়ে জানাতে বলেছি। পরিচয় গোপন রাখার বিষয়ও বলেছি। ছাত্রীরা অনেকে হলে ফিরতে শুরু করেছে। তাদেরকে মুখ খুলতে বা সাহসী হতে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।