ইবিতে নিয়োগ: আবেদনের শর্ত পূরণ না করেই ভাইভায় উত্তীর্ণ প্রার্থী

ইবি প্রতিনিধি |

আবেদনের শর্ত পূরণ করেননি প্রার্থী, তবু তাকে ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা)। পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণও হন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রকৌশল দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির প্লাম্বার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেটে এই পদে ওই প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে গত বছরের ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্লাম্বার (পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন সংক্রান্ত মিস্ত্রি) পদে আবেদনের জন্য প্রার্থীকে ন্যূনতম এসএসসি বা সমমান পাস, বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ বছর, কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ছয় মাসের প্লাম্বিং ট্রেনিংয়ের সনদ ও দুই বছরের প্লাম্বিং কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতার শর্ত দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও ব্যবহারিক কাজের বিবেচনায় অতিদক্ষ প্রার্থীর ক্ষেত্রে যে কোনো একটি শর্ত শিথিলযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়।

তবে প্লাম্বার পদে আবেদন করে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মিন্টু শেখ নামে এক প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের শর্ত পূরণ করতে পারেননি। জমা দেওয়া আবেদন ফরমের তথ্য অনুযায়ী, তিনি অষ্টম শ্রেণি পাস এবং তার বয়স ৩৯ বছর। এছাড়া তিনি নির্দিষ্টভাবে দুই বছর প্লাম্বিং কাজের অভিজ্ঞতাও দেখাননি। তিনি প্রকৌশল দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে কার্পেন্টার হেলপার হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছেন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একাধিক শর্ত পূরণ না করলেও আবেদন গ্রহণ করে তাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। পরে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড থেকে মিন্টুকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

গত ১১ জুলাই প্লাম্বার পদের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রধান প্রকৌশলী ও একজন বিশেষজ্ঞ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন। এতে মৌখিক পরীক্ষায় ছয় প্রার্থী অংশ নেন। বোর্ড থেকে মিন্টুর ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ ও অধিক দক্ষতা বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়। এ পদের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে দুজনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার পর্যায়ের এক কর্মকর্তা মিন্টু শেখকে ভাইভা কার্ড পাইয়ে দিতে তদবির করেন। একাধিক প্রার্থী ও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, গুঞ্জন রয়েছে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে মিন্টুর নিয়োগ চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে মিন্টু শেখ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নামমাত্র বেতনে ওই দপ্তরে একটা আশা নিয়ে কাজ করছি। শর্ত শিথিল করলে হয়তো চাকরি হবে। তিনি প্রতিবেদকের কাছে এসএসসি পাস করেছেন বলে দাবি করেন এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ইবির প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, এই ভাইভা বোর্ডের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তবে যতটুকু শুনেছি এখানে দীর্ঘদিনের কাজের বিষয় বিবেচনায় ভাইভা কার্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থ লেনদেনের কথা আমিও শুনেছিলাম; পরে ওদের জিজ্ঞাসা করলে লেনদেনের বিষয়টি সে অস্বীকার করেছে। 

তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী সহিদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, আমি এখন অবসরে আছি। এসব বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে আবেদন যাচাই ও ভাইভার চিঠি দেওয়ার বিষয়টি রেজিস্ট্রার দপ্তর দেখে থাকে।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, টেকনিক্যাল পোস্টগুলোর (পদ) ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরই আবেদন যাচাই-বাছাই করে। প্রকৌশল দপ্তর থেকে যেভাবে সুপারিশ করা হয়েছে, আমরা সেভাবে ভাইভার চিঠি ইস্যু করেছি। তারা কিভাবে সুপারিশ করেছে, এটা কাগজ না দেখে বলা যাবে না।

তবে ইবির সাবেক আরেক প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল বলেন, আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভাইভা কার্ড দেওয়ার পুরো কাজ রেজিস্ট্রার দপ্তরের। এখানে প্রকৌশল দপ্তরের কোনো কাজ নেই। কেউ আবেদনের শর্ত পূরণ না করলে তাকে ভাইভা কার্ড দেওয়ার নিয়ম নেই।

উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি সঠিকভাবে আমার জানা নেই। কোনো কারণে ভুল হয়ে (প্রার্থীকে) ভাইভায় ডাকা হতে পারে। তবে দুটি শর্ত পূরণ না হলে নিয়োগ হবে না। সিন্ডিকেট বিষয়টি অবশ্যই দেখবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এইচএসসিতে বরিশাল বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২৯ - dainik shiksha এইচএসসিতে বরিশাল বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২৯ পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে - dainik shiksha শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী - dainik shiksha মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের - dainik shiksha অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027439594268799