পোষ্যকোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলসহ ১৬ দফা দাবি নিয়ে গত একমাস ধরে আন্দোলন করছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কর্মকর্তারা। দাবি আদায়ে গত ২৬ জুলাই থেকে তাদের কর্মবিরতি শুরু হয়। প্রথমদিকে দুই ঘণ্টা ও পরবর্তীতে পাঁচ ঘণ্টা করে তারা কর্মবিরতি শুরু করে। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে এটি বাড়িয়ে পূর্ণকালীন কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা। দাবি আদায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানকে সিন্ডিকেট সভায় অংশ নিতে দেননি আন্দোলনকারীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে, রোববার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬১তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিন্ডিকেটের সদস্য সচিব হিসেবে সভায় অংশ নিতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান ভিসির বাসভবনে গিয়ে উপস্থিত হন। এর কিছু সময় পর কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুটের নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের একটি দল সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে রেজিস্ট্রারকে নিয়ে বের হয়ে আসে। এসময় ভিসির একান্ত সচিবসহ সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন তারা। পরবর্তিতে রেজিস্ট্রারকে তার কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে কর্মকর্তারা ঘিরে রাখেন। এতে সিন্ডিকেট সভা শুরু হতে বিলম্ব হয়। সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা অফিস ঘেরাও করে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে সিন্ডিকেট শেষ হলে সন্ধ্যা ৬টা দিকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
জানা গেছে, আইসিটি সেলের কর্মকর্তারা না থাকায় বাইরে থেকে অনলাইনে যুক্ত হতে চাওয়া সিন্ডিকেট সদস্যরা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হতে সমস্যা হয়। পরে তারা জুম একাউন্টের মাধ্যমে সভায় অংশ নেন। এছাড়াও রেজিস্ট্রার ও টাইপিস্টরা না থাকায় বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো রেজুলেশন আকারে নথিভুক্ত করা যায়নি।
এ বিষয়ে ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এটিএম এমদাদুল আলম বলেন, সিন্ডিকেট বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেখানে থাকা কর্মকর্তাদের আমরা নিয়ে এসেছি। আমরা ন্যয্য দাবিতে আন্দোলন করছি, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে জরুরি সেবাসমূহ যেমন মেডিকেল, বিদ্যুৎ, ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস-পরীক্ষা ও ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় এর আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন আমাদের সাথে টালবাহানা করছে। দাবি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে না। আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে বহুবার স্মারকলিপি দিয়েছি। অথচ তারা তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন না করে পরিকল্পিতভাবে এ সরকারের বদনাম যেন হয় সেজন্য তারা ক্যাম্পাসকে একটি অস্থিতিশীল জায়গায় ঠেলে দিয়েছে। এ জন্য আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। গত আগস্ট মাস শোকের মাস বলে আমরা তখন কোনো কঠোর কর্মসূচি নেইনি। এখন আমরা লাগাতার কর্মবিরতি গ্রহণ করেছি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে দাবিসমূহ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনের কাজে অংশ নেবে না। যার কারণে আজকের যে সিন্ডিকেট সভা ছিল, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমরা সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছি।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, আমি সিন্ডিকেট সভায় অংশ নিতে গিয়েছিলাম। কর্মকর্তা সমিতির নেতৃবৃন্দ আমাকে সেখান থেকে নিয়ে এসে অফিসে ঘেরাও করে রাখায় সভায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি। একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমি তো কর্মকর্তা সমিতির বাইরে যেতে পারি না।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের মুঠোফোনে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া প্রো ভিসি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও ট্রেজারার অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।