দৈনিক শিক্ষাডটকম, ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পরিবহনে ড্রাইভার নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ফেসবুকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের কণ্ঠসদৃশ একাধিক অডিও ভাইরাল হয়েছে। অডিওগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত এক ড্রাইভারকে চুক্তিকৃত টাকা প্রদান করতে চাপ দিতে শোনা যায়। তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটি তার নয়, এটা সুপার ইডিটেড বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হয়েছে। জিডি নং: ৯৬৮।
ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাতের পক্ষে সংগঠনটির শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুন্সি কামরুল হাসান অনিক ইবি থানায় জিডির আবেদন করেছেন। শনিবার (২৫ নভেম্বর) ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আননূর জায়েদ বিপ্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জিডিতে বলা হয়েছে, ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত-এর ছবি সংগ্রহ করে সুপার এডিটেড মিথ্যা অডিও রেকর্ডিং Sanjida Akter Tania নামে ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছে। যা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং শাখা ছাত্রলীগকে হেয় প্রতিপন্ন ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। গত ২৪ নভেম্বর আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় ওই অপরিচিত ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং উক্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর রাতে সানজিদা আক্তার তানিয়া (Sanjida Akter Tania) নামক ফেসবুক আইডি থেকে ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি অডিও পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, “২০ লাখ, ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে এভাবেই প্রশাসনের সাথে দীর্ঘদিন আঁতাত করে চাকরি বাণিজ্য করে যাচ্ছেন ইবি ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত। ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ড্রাইভার পদে মিলনকে চাকরি দিয়ে, মিলন টাকা দিতে গড়িমসি করায় কথোপকথনে ক্ষোভ ঝাড়েন নিয়োগ বাণিজ্যের হেডটিচার আরাফাত। টাকার বিনিময়ে কারো চাকরি লাগলে যোগাযোগ করতে পারেন আরাফাতের সাথে।”
ভাইরাল হওয়া ওই অডিওতে ইবি ছাত্রলীগের সভাপতির কণ্ঠসদৃশ কথোপকথন তুলে ধরা হলো, এক মাস সময় নিয়ে ৩ তারিখের কথা বলে আজ ১৫ তারিখ অর্থাৎ দেড় মাস হয়ে গেল। কি করবে না করবে সেটা তো আমার দেখার বিষয় না। আমার টাকা দিয়ে দাও। মাগুরায় আমার এক ভাই আছে ওকে দিলে ২৫ লাখ টাকা পেতাম আমি। বদরুল আছে ও ২০ লাখ টাকা নিয়ে বসে ছিলো। ওই ভাই টাকা নিয়ে বসেছিল, ওই যে আমার বিপুল আছে, চেয়ে নিতে যাবো কেন আমি। এক একজন ২০ লাখ টাকা খুশি হয়ে দিত, এগুলো আমার মুখের কথা বলতে দেরি। ওর চাকরির জন্য হাবিবুরের চাকরি হলো না হাবিবুর তো আমার ভাগ্নে হয়।
অডিওতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, জয়, জয়ের বুঝটা পেয়ে গেছে। পেয়ে যায়নি? দুইটার একটা ভাগ পেয়ে গেছে। জয় আমার বললো ভাই মিলন আপনার আত্মীয় মানুষ, আপনি মিলনের সাথে বুঝে নেন গা। জয় তো ওইটা থেকে আমার কিছুই দেইনি। আর জয় যদি এতক্ষণ না পেত তাহলে ও তো পাগলা কুত্তার মত হয়ে যেত। জয়ের কি এখন কোন জ্বালা আছে। ওর তো কোনো জ্বালা নেই। ওরটা ও পুরোটাই পেয়ে গেছে, মানে সিন্ডিকেটের ৩ তারিখ বিকালেই পেয়ে গেছে। মানে এখন থেকে দেড় মাস হয়ে গেল দেড় মাস আগেই নিয়ে নিছে। আর মিলনেরটা আমার উপর গায়ের উপর গড়াই দিয়েছে এবার আমার আম ছালা সব ঢুকেছে।
এ দিকে ২৪ নভেম্বর Islamic University Campus নামক ফেসবুক পেজ থেকে ছাত্রলীগ সভাপতির কণ্ঠসদৃশ ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের আরও একটি নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত অডিও পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘ইবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের নিয়োগ বাণিজ্যের ২য় এপিসোড ভাইরাল।’ ওই অডিওতে ছাত্রলীগ সভাপতিকে নিয়োগপ্রার্থীর নিকট টাকা চাইতে শোনা যায়।
ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, সামনে নির্বাাচন। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। এগুলো যে সুপার ইডিট তা বোঝাই যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে কার নিয়োগ হবে, কে নিয়োগ পাবে এগুলো নিয়োগ বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়। এগুলো ছাত্রলীগের কাজ না। ছাত্রলীগের কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করা। আমরা সেটাই করে যাচ্ছি।
ভাইরাল হওয়া অডিওতে কণ্ঠটি তার নয় বলে দাবি করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত। তিনি বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি অডিওটি শোনার পর আমি এটা নিশ্চিত যে এটা আমি না। এর পিছনে যে আছে আমি তার বিচার চাচ্ছি।