ইবি রেজিস্ট্রারের গোপন লেনদেনের অডিও ফাঁস!

ইবি প্রতিনিধি |

বিতর্ক যেনো পিছু ছাড়ছেই না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসনকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্য অধ্যাপক ড শেখ আব্দুস সালামের কন্ঠসদৃশ শিক্ষক নিয়োগসহ বেশ কয়েকটি অডিও ফাঁসের ঘটনায় রেশ না কাটতেই আবারও অডিও ফাঁস হয়েছে। 

এবার বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসানের অডিও কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। যেখানে এক মঈন নামের এক ঠিকাদারের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কথা হয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ. এম. আলী হাসানের। 

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাত ১২টার পরে ‘সাথী খাতুন’ নামে এক ফেসবুক আইডি থেকে চার খণ্ড বিশিষ্ট একটি ফোনালাপ প্রকাশ করা হয়। 

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে বলতে শোনা যায়, একপ্রান্ত থেকে ঠিকাদার বলছেন, ‘স্যার আজকে তো জমা দিলাম কালকে ক্যাশ হবে। তো টাকাটা কখন কিভাবে আপনাকে প্লেস করব সেটা যদি একটু বলতেন, প্রিপারেশন নিয়ে নিতাম আরকি।’

তখন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে বলছেন, ‘তিনটার সময় কুষ্টিয়ায় দিতে পারবেন।’ 

এর জবাবে ঠিকাদার জানান, ‘তিনটার সময় পারবো না স্যার সাড়ে চারটার সময় পারব। ব্যাংক থেকে সাড়ে চারটার সময় পাব। চার লাখ টাকা পাবো, হইলো আপনার টোটাল টাকাটাই পাবো। আপনার ৪ লাখ টাকা আমি সাড়ে চারটায় পাব। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আপনাকে দিতে পারব।’

এরপর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তখন ওই ঠিকাদরকে বলেন, ‘ফোনে এসব বলার দরকার নাই।’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আচ্ছা স্যার। না না আমি সেইফ জায়গায় আছি স্যার।’

এরপর তাদের মাঝে আরও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তাতে টাকা আদান প্রদান সংক্রান্ত বেশকিছু আলাপচারিতা হয়েছে এবং ঠিকাদারের টাকা দিতে দেরি হওয়া একইসাথে টাকা নিতে ঠিকাদারের জন্য ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ. এম. আলী হাসানের অপেক্ষা করার বিষয়টি কল রেকর্ডগুলোতে বলতে শোনা গেছে।

এদিকে এ ঘটনায় বুধবার (১৫ মার্চ) রেজিস্ট্রার ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ইবি থানা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটি এডিট করা বলে দাবি করেছেন রেজিস্ট্রার এইচএম আলী হাসান। এ বিষয়ে থানায় জিডিও করেছেন তিনি।  

জিডিতে এইচএম আলী হাসান লেখেন, 'অডিওটির বিষয়ে আমি ১৫মার্চ সকাল ১০টায় শুনেছি। কথোপকথোনের বিষয়টি শুনে আমি মনে করি যে, বিষয়টি এডিট করে করা হয়েছে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রকল্প পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ঠিকাদারদের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হয়েছে। প্রকল্প সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থেই কথা বলেছিলাম নির্মাণ কাজের সঙ্গে  জড়িতদের সঙ্গে।

তিনি দাবি করেন, কিন্তু ভাইরাল হওয়া অডিও'র বিষয়ে এ ধরনোর কোনো আর্থিক লেনদেনের আলাপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রকল্প পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে থাকা অবস্থায় হয়নি। টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রকৌশল অফিস হতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। সেখানে প্রকল্প পরিচালক ও পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), প ও উ: এর তেমন কিছু করার থাকে না। ভবিষ্যতে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য কুচক্রি মহল এ ধরণের জঘন্য ঘটনার আরও প্রয়াস চালাতে পারে। এমতাবস্থায়, বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে রাখা একান্ত প্রয়োজন। 

এর আগে, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি ফারহা জেবিন ও মিসেস সালাম নামের দুটি ফেসবুক আইডি থেকে সাতটি অডিও পোস্ট করা হয়। অডিওর কথোপকথনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড শেখ আব্দুস সালামের বলে দাবি করা হয়। এসব অডিওতে নিয়োগ নিয়ে ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে উপাচারর্যকে বিভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়। তবে অডিওটিতে অন্য প্রান্তের কোনো কথা শোনা যায়নি।  

অডিওতে একটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বাতিল হওয়ার কারণ ও আগামীতে বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও নিয়োগ প্রার্থীকে বিভিন্ন প্রশ্ন বলে দেওয়া হয়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের ঘটনা নিয়ে এ আলোচনা করা হয়। অডিওতে ওই বিভাগের অলি নামের (সংক্ষিপ্ত নাম) এক শিক্ষক প্রার্থীর নাম ধরে সম্বোধন করতে শোনা যায়।

এ ঘটনায় শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপাচার্যের নির্দেশে ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান।

বিষয়টি নিয়ে দৈনিক মুজুরী ভিত্তিক কর্মচারী ও চাকরী প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে উপাচার্য বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকেন। টানা কয়েকদিন উপাচার্যের কার্যালয়ে তারা তালা দিয়ে অবরূদ্ধ করে রাখে। পরে ২০ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন ভবনের সামনে মাইকে উচ্চ আওয়াজে অডিও বাজানো হয়।

এছাড়াও অডিওতে উপাচার্যের কথোপকথনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম। একই অভিযোগে ক্ষুব্ধ ও হাতাশা ব্যক্ত করে উপাচার্যের অবস্থান জানানোর দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

এসব ঘটনার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ৩ মার্চ পর্যন্ত ছুটি নিয়ে উপাচার্য সপরিবারে ঢাকায় চলে যান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা শূন্যপদে বদলির দাবিতে শিক্ষকদের লংমার্চ - dainik shiksha শূন্যপদে বদলির দাবিতে শিক্ষকদের লংমার্চ শিক্ষকতা ছেড়ে আওয়ামী লীগে, সম্পদের পাহাড় গড়েন বাবুল - dainik shiksha শিক্ষকতা ছেড়ে আওয়ামী লীগে, সম্পদের পাহাড় গড়েন বাবুল শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা জাতীয়করণের দাবিতে সপ্তম দিনের অবস্থান ধর্মঘটে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা - dainik shiksha জাতীয়করণের দাবিতে সপ্তম দিনের অবস্থান ধর্মঘটে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা এখনো ট্রমার মধ্যে - dainik shiksha খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা এখনো ট্রমার মধ্যে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024759769439697