ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক ভবন ‘মেঘনা’তে ওই শিক্ষিকার বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই অভিযুক্ত কর্মচারীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা উম্মে সালমা লুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। অভিযুক্ত জে এম ইলিয়াস আইসিটি সেলের নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান।
শিক্ষিকা লুনার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাসার ইন্টারনেট সংযোগ ঠিক করতে টেকনিশিয়ান ইলিয়াসকে দুবার ফোন করেন লুনা। তবে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার গাড়িচালক ইলিয়াসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরদিন ইন্টারনেট সংযোগ চালুও করে দেন ইলিয়াস। তবে শিক্ষিকা লুনা তখন বাসায় না থাকায় গৃহকর্মীর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে পাসওয়ার্ড জানার জন্য ইলিয়াসকে ফোন দেন। ইলিয়াস তখনো ফোন না ধরায় গাড়িচালকের ফোন দিয়ে ফোন না ধরার কারণ জানতে চাইলে লুনার সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন ইলিয়াস।
পরবর্তীতে ইলিয়াসের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়ে অন্য শিক্ষকদের অবহিত করেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা লুনা। এরপর ওইদিনই সন্ধ্যায় টেকনিশিয়ান ইলিয়াস ভুক্তভোগী শিক্ষিকার বাসায় আসেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে ইলিয়াস বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার সখ্যর কথা জানান।
এ সময় ইলিয়াস শিক্ষিকাকে বলেন, ‘আচ্ছা ম্যাডাম, একজন শিক্ষকের ইন্টারনেট কানেকশন এত কিসের প্রয়োজন? অন্য শিক্ষকদের মতো আপনিও ঊনিশ-বিশ দেখেন নাকি?’ এ ছাড়া ইলিয়াস বাসা থেকে বের হয়ে প্রচার করতে থাকেন লুনা ভুল করায় তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা লুনা বলেন, ‘তিনি (ইলিয়াস) আমার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করেছেন। এ রকম ঘটনা আমার ও পুরো শিক্ষক সমাজের জন্য ন্যক্কারজনক। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জে এম ইলিয়াস অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি এমন কিছু বলেননি। উল্টো ঘটনার দিন শনিবার ভুক্তভোগী শিক্ষিকার স্বামীর পরিচয়ে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালগাল করেছেন- পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ইলিয়াস। সোমবার এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এমনকি ইবি থানায় জিডিও করেন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে সোমবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনকে আহ্বায়ক, উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব এবং ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনকে সদস্য করা হয়েছে। তাদের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষিকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’