ইলা মিত্রের জন্মদিন আজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

উত্তরাঞ্চলের আদিবাসিদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ইলা মিত্রের জন্মদিন আজ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিপ্লবী রানী মা ইলা মিত্রের অবদানের কথা অস্বীকার করা যায় না। মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থী শিশু শিল্পীসহ সীমান্তের ওপারে আশ্রয় নেয়া সবাইকে সহযোগিতা করতে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তার নিঃস্বার্থ হাত।

অখণ্ড ভারতের বিপ্লবী নারী নেত্রীর প্রকৃত নাম ইলা সেন ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের  এই দিনে যশোরের ঝিনাইদহের বাগুটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে বাংলার একাউন্টেন্ট জেনারেল ছিলেন। বাবার পেশাগত কারণে পরিবারটিকে চলে যেতে হয় ওপার বাংলার কলকাতায়। ইলাসেন বেড়ে ওঠেন এখানে। কলকাতার বেথুন স্কুল এবং কলেজে লেখাপড়া করেন।

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তুখোর ক্রীড়াবিদ ইলা মিত্র জাপানের অলিম্পিকে যাবার সুযোগ পান কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের কারণে সেখানে তার যাওয়া হয়নি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তিনি রাখেন ভূমিকা। রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা মহিলা সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে হিন্দু কোট বিল ও সনাতনপন্থীদের উত্থাপিত যুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বেথুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে অনার্স করে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও সংস্কৃতিতে এমএ করেন। নারী আত্মরক্ষা সমিতির মাধ্যমে তার বাম রাজনীতিতে প্রবেশ।

  ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে অখণ্ড ভারতের মালদহ জেলার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানার রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার নামকরা জমিদার পরিবারের রমেন্দ্র মিত্রের সঙ্গে বিয়ে হবার পর তার নামের পদবী হয়ে যায় ইলা মিত্র। জমিদার পরিবারের হয়েও তার মানসিকতা পরিবর্তন হয়নি। বামধারার ইলা মিত্র চলে এলেন এপার বাংলার চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুর হাটের শ্বশুরবাড়িতে।

তার স্বামীরও মানসিকতা ছিলো বামধারার। স্বামীর বন্ধু আলতাফ মিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা ও গ্রামবাসীর প্রস্তাবে শশুর বাড়ির সহযোগিতায় তিনজন ছাত্রী নিয়ে তিনি শুরু করেন একটি স্কুল। এরপর ছাত্রীর সংখ্যা হয় ৫০ জন,সারা পড়ে যায় সেখানে ও আশেপাশে। ইলা মিত্র ও তার স্বামী জমিদারী ও পারিবারিক ঐতিহ্য সুযোগসুবিধা উপেক্ষা করে আদিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে থাকেন। ইলা মিত্র তাদের কাছে হয়ে গেলেন রানী মা। দিনাজপুরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জননেতা হাজী দানেশের তেভাগা আন্দোলনের ধারায় তিনি নেতৃত্ব দিতে থাকেন।

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় নোয়াখালীতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে দাঙ্গা নিরসনে ভূমিকা রাখেন। অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনায় ভারত বর্ষ বিভক্তির পর অনেকে ওপার বাংলায় চলে গেলেও এ পরিবারটি এপার বাংলায় থেকে যান। পাকিস্তান সরকার বাম রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে অনেকেই সীমান্ত পার হয়ে চলে গেলেও তিনি ও তার স্বামী আত্মগোপনে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে থাকেন। শোনা যায় ইলা মিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটার সময় তার পোশাক কথাবার্তায় স্টেশন মাস্টারের 

সন্দেহে ধরা পড়ে গেলে তাকে বন্দি রেখে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন।  তাকে করা হয় পাশবিক নির্যাতনও। ভাষা সৈনিক সাঈদ উদ্দিন আহমেদের তথ্যে জানা যায় এ সময়  আদিবাসী গ্রামগুলো আগুনে পুড়িয়ে তাদের নির্যাতন করা হয়, অনেক কে দিতে হয় জীবন।

ইলা মিত্রকে রাজশাহী জেলে বন্দি রাখা হয়, তাকে মুক্ত করতে আইনজীবী নরেন মুন্সী, বীরেন্দ্রনাথ সরকার (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), আতাউর রহমান ( বঙ্গবন্ধু সরকারের রাজশাহী জেলা গভর্নর ও ন্যাপ নেতা ) প্রমুখ তার পক্ষে আইনি লড়াই শুরু করেন। তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বিষয়টি অবগত করিয়ে তাকে প্যারোলে মুক্ত করে সীমান্ত পার করে দেন। সীমান্তের ওপারে গিয়ে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি রাজনীতি করতে থাকেন ও সাংসদ নির্বাচিত হন। 

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা অপরিসীম। বেশ কয়েক বছর আগে সাবেক সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা ও ওয়ার্কার্স পার্টির আমন্ত্রণে তিনি নাচোলে আসেন, তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি তার বক্তব্যে সেই দিনের কথা তুলে ধরেন। তাকে দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে।

ইলা মিত্র ‘হিরোশিমার মেয়ে’ বইটি লিখে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার পান। ভারত সরকার দেন স্বাধীনতা পদক। ভারতের পশ্চিম বাংলা সরকার দেন সেরা ক্রীড়াবিদ পুরস্কার। ইলা মিত্রের অনুবাদ করা বইগুলো হলো ‘লেলিনের জীবনী;‘জেলখানার চিঠি;’মনে প্রানে;রাশিয়ার ছোট গল্প'।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর  না ফেরার দেশে চলে গেলেও তিনি আজও আদিবাসী বঞ্চিত মানুষসহ সকলের কাছে রানী মা। তাকে স্মরণীয় করে রাখতে তার নামে নাচোলের একটি সড়কের নামকরণ ও সড়ক তোড়ণ নির্মাণ করা হয়েছে। চিত্রপরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান  ডাইমন্ড তাকে নিয়ে তৈরি করেছেন একটি চলচ্চিত্র ‘নাচোলের রানী মা’। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057768821716309