দৈনিক শিক্ষাডটকম, ইবি : তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারাদেশ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) চলছে পুরোদমে। তবে তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে ক্যাম্পাসে আগের মতো পদচারণা নেই শিক্ষার্থীদের। কমেছে ক্লাসে উপস্থিতিও। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। জরুরি প্রয়োজনে ছাতা নিয়ে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, ঈদের ছুটি শেষে গত ২০ এপ্রিল থেকে একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খোলার পর থেকেই চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ক্যাম্পাসে দিনের বেলায় তাপমাত্রা থাকছে ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে বাইরে অবস্থান করা কঠিন হয়ে উঠেছে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ক্লাস পরীক্ষা চালু থাকায় একাডেমিক ভবনের বাইরে শিক্ষার্থীদের তেমন দেখা মিলছে না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত আড্ডার স্থান ও খেলার মাঠগুলোতেও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি নেই। আবাসিক হলগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা ও জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না।
দিদারুল ইসলাম নামের সাদ্দাম হোসেন হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকদিন থেকে যেভাবে তাপপ্রবাহ চলছে তাতে রোদের মধ্যে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ক্লাস চালু থাকায় কোনো রকম ক্লাস শেষ করে আবার হলে চলে আসি। গরমে তেমন কেউই ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছে না।
কলা অনুষদের শিক্ষার্থী রেদোয়ানুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন যেভাবে তাপপ্রবাহ চলছে তাতে ক্লাস করা কঠিন। ক্লাসে ফ্যানের নিচে বসেও ঘামতে হচ্ছে। কিছু বিভাগে এসি ক্লাসরুম থাকলেও আমরা এ সুবিধা পাচ্ছি না। একই পরিমাণ ফি দিয়ে কেউ এসি রুমে ক্লাস করছে অন্যদিকে আমরা ঘেমে নেয়ে ক্লাস করছি এটা বৈষম্যমূলক। এভাবে ক্লাস করা যায় না। এমন তাপপ্রবাহে সরাসরি শ্রেণিকার্যক্রম বন্ধ করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রেণিকার্যক্রম চলমান থাকলেও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকছে না। বেশ কয়েকটি বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ক্লাসে উপস্থিতি নেমে এসেছে মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকে। আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ক্লাস চালু থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। সর্বোচ্চ ৫০-৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে। আমি বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসেছিলাম। শিক্ষার্থীরা গরমের ভয়ে ক্লাসে আসছে না। সবমিলিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকলেও শ্রেণিকার্যক্রম জমে উঠছে না।
এদিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা কমায় প্রভাব পড়েছে ক্যাম্পাস দোকানি ও ভ্যানচালকদের মাঝেও। দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের তেমন দেখা মিলছে না।
মীর মোশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন পাশের ফটোস্ট্যাট ও স্টেশনারি দোকানি রুকন উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রী একদমই কম। খোলার পর একদিন শিক্ষার্থীরা দোকানে এসেছে। এরপর থেকে তেমন কাউকে পাচ্ছি না। ফরম ফিলআপ বা জরুরি কিছু কাজ ছাড়া তেমন কেউ দোকানে আসছে না। ফলে বেশিরভাগ সময় বসে থাকতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. পারভেজ হাসান বলেন, গরমের কারণের সাধারণত যে সমস্যাগুলো সেগুলো কিছুটা বেড়েছে। ক্যাম্পাস খোলার খুব বেশিদিন না হওয়ায় এর প্রভাবটা খুব বেশি বোঝা যাচ্ছে না। তবে আরও ৮-১০ দিন এমন তাপপ্রবাহ চললে হয়তো এর প্রভাব বোঝা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, তাপপ্রবাহ নিয়ে প্রশাসন মিটিং করেছে। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে যেহেতু মঙ্গলবার-শনিবার পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকছে এজন্য নতুন করে আর ছুটি বা অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে যদি তাপপ্রবাহ চলতে থাকে এবং সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি করে তখন মিটিং করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।