ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম থেকে এরই মধ্যে সরে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিগত সরকারের আমলেই ওই কারিকুলামের প্রশিক্ষণ নেয়া শিক্ষকরা পড়েছেন মহা গ্যাঁড়াকলে। তাদের প্রশিক্ষণের ভাতা পরিশোধ করছে না সম্প্রতি নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত ইসলামী ব্যাংক।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিনরাত-শিক্ষা ভবন ও ব্যাংকে ধরণা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। তিন মাসেরও অধিক সময়ে ধরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের পাওনা আটকে রেখেছে। কেবল ঢাকার শিক্ষকরাই এ খাতে প্রায় দুই কোটি টাকা পাবেন ইসলামী ব্যাংকের কাছে। অন্তত ৩ হাজার ৮শ শিক্ষক এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
ঢাকা শিক্ষা অফিস সূত্র বলছে, তিন মাস শিক্ষকদের প্রশিক্ষণভাতা বাবদ তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা যথাসময়েই দেওয়া হয়। বিএফটিএনের মাধ্যমে এই টাকা জমা হয় তাদের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু যেসব শিক্ষকের ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ব্যাংকে হিসাব রয়েছে তারা তাদের টাকা পাননি। এ বিষয়ে এখনো এই দুই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মজিদের বক্তব্য, ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে যখন টাকা জমা দেওয়া হয়, তখন সেটি বাউন্স ব্যাক করে। অর্থাৎ কারও অ্যাকাউন্টের শেষ নম্বর যদি ১০ থাকে, সেটি ১১ নম্বর অ্যাকাউন্টে ফিরে গেছে। এর ফলে ঢাকার ৩ হাজার ৮০০ শিক্ষক তাদের ভাতা পাননি। স্থানীয় ব্যাংকে তারা বার বার যোগাযোগ করেছেন। ব্যাংক থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, টাকা দেওয়া হয়নি। এর ফলে শিক্ষা অফিসগুলোতে তারা এসে ভিড় করছেন। ঢাকার বাইরেও এমন অহরহ ঘটনা রয়েছে।
ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কী না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বারবার বলছে, বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। কিন্তু তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো কোনো সমাধান হয়নি।
শিক্ষকরা জানান, নতুন প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। যাতায়াত দূরত্ব ও আবাসন বিবেচনায় কয়েকজনের ভাতার পরিমাণ আরও বেশি। এতে শুধু মাত্র ঢাকার শিক্ষকরাই ইসলামী ব্যাংকের কাছে দুই কোটি টাকা পাবেন।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মওলাকে একাধিকবার কল, মেসেজ দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের তথ্য নিয়ে আগে থেকেই জটিলতায় ছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এই সংস্থার অধীনে একটি ‘স্কিমের’ (প্রকল্প) আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এই খাতের ব্যয় বিবরণী নিয়েও একাধিক উপজেলা থেকে অভিযোগ এসেছিল।
প্রসঙ্গত, নতুন কারিকুলামের আওতায় ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নতুন কারিকুলাম পরিবর্তনের কারণে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করা হবে। যা নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তব বোর্ড (এনসিটিবি) কাজ করছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের স্কিম পরিচালক মাহফুজ আলী বলেন, কারিকুলাম একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগামীতে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের প্রশিক্ষণের বিষয়ে স্কিমটি কাজ করছে। এ নিয়ে এনসিটিবি মাস্টারপ্লান করছে।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি জানান, গত জুন-জুলাই মাসে প্রশিক্ষণের টাকাগুলো স্কিম থেকে দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলায় ডিডিওরা শিক্ষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছেন।
তিনি জানান, অনেক শিক্ষক ছিলেন, যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ছিলো না। কিন্তু প্রশিক্ষণের টাকা হাতে দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। এখন জানতে পারছি, ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু ব্যাংক শিক্ষকদের টাকা দিচ্ছে না। বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও জানিয়েছি। শিক্ষা কর্মকর্তারাও চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেক ব্যাংকে কর্মকর্তা না থাকায় শিক্ষকরা ক্লাস ফেলে ব্যাংকে বসে আছেন। টাকাটি শিক্ষকদের প্রাপ্য। ব্যাংকের উচিত দ্রুত এর সমাধান করা।