ইসলাম প্রচারের পর কীভাবে চালু কোরবানি

বিবিসি অবলম্বনে |

ইসলামিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মক্কায় প্রতি বছরই কোরবানি দেয়া হতো। কিন্তু তখন মক্কার বাসিন্দার বিভিন্ন দেবদেবীর নামে সেগুলো কোরবানি দিতেন। ফলে ইসলামের নবী সেই সময় মক্কায় থাকলেও তিনি এই রীতি অনুসরণ করতেন না। নবুয়ত প্রাপ্তির প্রায় তের বছর পরে মদিনায় হিজরত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানি দেয়ার রীতি চালু হয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ বিভাগের উপ-পরিচালক মাওলানা মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলেন, ইসলামের অনেক বিধিবিধান রাসুল (সাঃ) মদিনায় আসার পর কার্যকর হয়েছে। কারণ তিনি ইসলাম প্রচার শুরু করার পর মক্কার মানুষের মধ্যে একাত্মবাদ প্রতিষ্ঠা ছিল প্রাথমিক কাজ। আর মদিনায় হিজরত করে আসার পর ইসলামের বিধিবিধান জারি হয়।

হিজরি দ্বিতীয় সনে রোজা ও ঈদুল ফিতরের প্রবর্তন হয়েছিল। অবশ্য তার আগে থেকেই মদিনার মানুষজন অনেকটা একই আদলে উৎসব এবং রোজা পালন করতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজী বলেছেন, হিজরি দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন করা হয়েছিল।

আনাস নামে নবী মুহাম্মদের একজন সাহাবী বা সাথীর বর্ণনা করা একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মদিনায় যাওয়ার পর নবী দেখলেন যে সেখানকার মানুষ বছরে দুইটি বড় উৎসব পালন করে।
তিনি তখন জানতে চান, সেগুলো কী উৎসব?

এগুলো ছিল নওরোজ এবং মিহিরজান নামে দুটি উৎসব - যেগুলো সেখানকার বাসিন্দাদের ধর্ম এবং গোত্রের রীতি অনুযায়ী একটি শরতে এবং আরেকটি বসন্তকালে উদযাপিত হত।

অধ্যাপক মিয়াজী বলেছেন, তখন ওই দুইটি উৎসবের আদলে মুসলমানদের জন্য বছরে দুইটি ধর্মীয়, সামাজিক এবং জাতীয় উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তন করা হয়।
সেই দুই ঈদের একটি হজের সময় পালন করা হতো, যা ঈদুল আজহা নামে পরিচিত।

তবে ইসলাম প্রচারের পর ঠিক কবে আর কীভাবে প্রথম কোরবানি দেয়া হয়েছে সেই সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায় না।

কোন কোন ইতিহাসবিদ বলেন, মদিনায় আসার পর ইসলামের নবী প্রথম দুইটা দুম্বা নিজ হাতে কোরবানি দিয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, একটা আমার নিজের পক্ষ থেকে আরেকটা আমরা উম্মতের পক্ষ থেকে। 

মাওলানা মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলেন, ইসলামের অনেক কিছুই আগের পয়গম্বরদের রীতি মেনে করা হয়েছে। যেমন প্রথম দিকে বায়তুল মোকাদ্দেসের দিকে সিজদা করা হলেও পরবর্তীতে ইব্রাহিম (আঃ) এর আদর্শ অনুযায়ী কাবার দিকে সিজদা করা হয়। কোরবানির ব্যাপারটিও তেমনি এসেছে।

তিনি বলছেন,  ইসলামের কোরান ও হাদিস অনুযায়ী, আদম (আঃ) থেকে কোরবানি শুরু হয়েছে। তবে সুরা কাওসার ও সুরা হজে কোরবানি করার নির্দেশনা পাওয়া যায়। এই সুরা কাওসার নাজিল হয়েছিল হিজরতের আগেই, রাসুল (সাঃ) মক্কায় থাকার সময়। আর সুরা হজ মক্কা ও মদিনায় মিলিয়ে নাজিল হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

এই দুইটি সুরাতেই কোরবানি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মি. পাটোয়ারি বলছেন, এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, রাসুল (সাঃ) মক্কায় থাকার সময় থেকেই কোরবানির বিষয়টা এসেছে।

তবে তিনি প্রথম কবে কোরবানি দিয়েছেন, সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

মাওলানা মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী জানাচ্ছেন, তিরমিজি হাদিসে উল্লেখ আছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেছেন, হিজরতের পরে রাসুল (সাঃ) ১০ বছর মদিনায় ছিলেন, ১০ বছরেই কোরবানি করেছেন। আর আনাস ইবনে মালিক বলেছেন, রাসুল (সাঃ) দুইটা শিং ওয়ালা নাদুস-নুদুস দুম্বা জবাই করেছেন আর বলেছেন একটি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে একটা আমার পক্ষ থেকে।

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, তিনি সবসময়ে দুটা দুম্বা কোরবানি দিতেন, বলছেন মি. পাটোয়ারি। আলেম বা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই সময় কোরবানির বিষয়টি ছিল অনেকটাই হজ কেন্দ্রিক।

যারা হজ বা ওমরাহ করতে যেতেন, তারা কোরবানির জন্য উট বা দুম্বার মতো পশু সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। এসব পশুকে বলা হতো হাদি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজী বলছেন, ষষ্ঠ হিজরিতে বা ৬২৮ খৃষ্টাব্দে যখন রাসুল (সাঃ) ওমরাহের উদ্দেশ্যে রওনা হন, তখন হুদাইবিয়ায় বাধা দেয়া হলে তিনি তাবুতে অবস্থান করেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি হলে তিনি সেই সময় নিজের ও পরিবারের জন্য উট কোরবানি দেন। এ সময় তিনি ৬৩টি উট কোরবানি দেন বলে জানা যায়। সেই সময় ইসলামের বিধিবিধানে উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কোরবানি দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

এই বিষয়ে মাওলানা মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলেছেন, ষষ্ঠ হিজরিতে ওমরাহ করতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় পশুগুলোকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম ছিল। তখন কোরবানি ছাড়া আরেকটা রীতি ছিল। পশুগুলোর সিনায় কেটে দাগ লাগিয়ে মক্কার দিকে ছেড়ে দেয়া হতো, যাতে বোঝা যেতো যে এগুলো কোরবানির পশু। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কিছু পশু কোরবানি দেয়া হয়, আর কিছু পশুকে সিনায় দাগ লাগিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

মি. পাটোয়ারি বলছেন, দশম হিজরিতে রাসুল (সাঃ) মক্কা বিজয়ের পর সেই বছর তিনি নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে হজ করেন এবং কোরবানি দেন।

এর আগের বছর সাহাবী আবুবকরের নেতৃত্বে একটি দলকে হজের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেই দলের সঙ্গেও কোরবানির জন্য হাদি বা পশু ছিল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা শূন্যপদে বদলির দাবিতে শিক্ষকদের লংমার্চ - dainik shiksha শূন্যপদে বদলির দাবিতে শিক্ষকদের লংমার্চ শিক্ষকতা ছেড়ে আওয়ামী লীগে, সম্পদের পাহাড় গড়েন বাবুল - dainik shiksha শিক্ষকতা ছেড়ে আওয়ামী লীগে, সম্পদের পাহাড় গড়েন বাবুল শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা জাতীয়করণের দাবিতে সপ্তম দিনের অবস্থান ধর্মঘটে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা - dainik shiksha জাতীয়করণের দাবিতে সপ্তম দিনের অবস্থান ধর্মঘটে ইবতেদায়ি শিক্ষকরা খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা এখনো ট্রমার মধ্যে - dainik shiksha খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা এখনো ট্রমার মধ্যে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062088966369629