শরিফ আহমাদ, দৈনিক শিক্ষাডটকম: ঈদ শুধু আনন্দ উৎসব আর ভোগ-বিলাসের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন ইবাদতের দ্বারা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। ঈদুল ফিতরে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আছে বেশ কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—
ঈদের রাতে ইবাদত : ঈদের রাতে তারাবির নামাজ নেই, তবু সাধ্যমতো নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার দোয়া-দরুদ ইত্যাদি করা যায়।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যেদিন অন্তরসমূহ মুর্দা হয়ে যাবে।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)
ঈদের দিনে করণীয় : ঈদের দিনের প্রধান কাজ নির্ধারিত সুন্নত মোতাবেক নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং মিষ্টিজাতীয় কিছু খেয়ে আগেভাগেই নামাজ আদায় করতে যাওয়া।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হলো, যে পরিশুদ্ধ হয়েছে, তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করেছে এবং নামাজ আদায় করেছে।
(সুরা : আ‘লা, আয়াত : ১৪-১৫)
ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবিরে তাশরিক অর্থাত্ ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা সুন্নত।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন।
(মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ১১০৬)
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা : ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।’ এর অর্থ, আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুন।
(আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ১৭৫৮৯)
ঈদের দিনে বর্জনীয় কাজ : ঈদ মুসলিম জাতির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।
(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯৮৯)
ঈদের পোশাক নির্বাচন : প্রতিটি সমাজে নারী-পুরুষের আলাদা পোশাক আছে। দেহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরাই শরিয়তের নির্দেশ। ঈদের সময় পোশাক-আশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) মহিলার পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীকে লানত করেছেন।
(আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৯৮)
অশ্লীলতার ব্যাপারে সতর্ক থাকা : সিয়াম সাধনার মাসে সবাই যেমন গুনাহর ব্যাপারে সতর্ক ছিল, ঠিক তেমনি সারা বছর থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে ঈদের দিনগুলোতে অশ্লীলতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। কেননা এগুলো হারাম হওয়া সত্ত্বেও ঈদ উপলক্ষে আরো বেশি এগুলো রিলিজ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
ঈদের দিনের নিষিদ্ধ কাজ : ঈদের দিন মহান আল্লাহ সবাইকে মেহমানদারি করেন। এদিন নিজে খাওয়া এবং অন্যকে খাওয়ানোর দিন। তাই এদিন রোজা রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ও কোরবানির ঈদের দিন রোজা পালন করা থেকে, সাম্মা ধরনের কাপড় পরিধান করা থেকে, এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের ওপর বসতে (কেননা এতে সতর প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে) এবং ফজর ও আসরের পর নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
(বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৪)