দৈনিক শিক্ষাডটকম, কুমিল্লা: কুমিল্লায় এবার ঈদ আনন্দ নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রয়াত শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার বাসায়। ঈদ যেন এ পরিবারের শোক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের ২২ রমজানে (২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল) অবন্তিকার বাবা অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন ৫৩ বছর বয়সে বারডেম হাসপাতালে মারা যান। সেই বছরের ঈদ পরিবারটির জন্য ছিল একটি বড় দুর্যোগ। এবারের রমজান শুরুর আগেই অবন্তিকাকে তার মা কথা দিয়েছিলেন এবারের ঈদে কুমিল্লা আসার পর তাকে পছন্দের জামা-কাপড় কিনে দেবেন।
‘ভাবতাম আমিই সন্তানের বাবা-মা।
কিন্তু স্বামীর পর এ বছর তার (অবন্তিকা) মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সব তছনছ হয়ে গেল। তাকে কবরে রেখে এখন আর কীসের ঈদ’, কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।
কুমিল্লার ঝাউতলা এলাকার একটি বাসায় বসবাস অবন্তিকার পরিবারের। মেয়েকে নিয়ে ঈদের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে মা শবনম বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ঈদের সময় কাছাকাছি এলে মেয়েটি বাবার ছুটির অপেক্ষায় থাকত। অবন্তিকার বাবা কলেজ শিক্ষক, তাই তার বেতন-বোনাসের ওপরই চলত আমাদের সংসার। বেতন-বোনাস হাতে এলে অবন্তিকার বাবা, ভাইসহ আমরা চারজন একসঙ্গে মার্কেটে যেতাম। বাবা শিক্ষক, তাই অবন্তিকা ও তার ছোট ভাই জারিফ জাওয়াদ অপূর্বের চাহিদা তেমন ছিল না। আমরা চাইলেও অবন্তিকা বেশি দামের জামা নিতে রাজি হতো না। দামি জুতা দিতে চাইলে অর্ধেক দামে জুতা কিনেই খুশি থাকত।
তিনি বলেন, বাসায় অবন্তিকা ঈদের সময়ে বিভিন্ন সেমাই রান্না করত। সে ভালো চাইনিজ খাবার রান্না করতে পারত। অবন্তিকার বাবা বছরে অন্তত একবার হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্যুরে যেতেন আমাদের নিয়ে। ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেয়ের প্রতি ওর টান ছিল বেশি। যখন মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস থাকত প্রয়োজনে ট্যুরের তারিখ পিছিয়ে দিতেন। মেয়েও বাবাকে ছাড়া কিছু বুঝত না। কুমিল্লার বাসায় এলে ওর বাবা যখন অসুস্থ থাকত, রাত ৩টায়ও বাবার বিছানায় গিয়ে হাত-পা-মাথা টিপে দিত।
এবারের ঈদ প্রসঙ্গে শবনম বলেন, ছেলেটা এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, ফলাফলের অপেক্ষায় আছে। বোনের জন্য ওর মন খারাপ। বাবার মৃত্যুর কারণেও প্রস্তুতি ভালো ছিল না। শোকের এ সংসারে এখন মা ছেলের বাঁচার লড়াই। আত্মীয়স্বজনসহ অনেক বন্ধুবান্ধব ঈদের উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। এসব উপহার দেখলে কান্নায় বুক ভেঙে যাচ্ছে। ছেলেটা সামনে থাকলে এখন কান্নাও করতে পারি না। উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ রাতে কুমিল্লা নগরীর বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জবি ছাত্রী অবন্তিকা। আত্মহত্যার আগে তিনি নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকের বিরুদ্ধে হয়রানি ও উৎপীড়নের নানা অভিযোগ করে যান।
পরদিন রাতে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় দুজনকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। তাদের গ্রেফতার করে কুমিল্লা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। উভয় আসামি বর্তমানে কুমিল্লা কারাগারে আছেন।