উগ্রবাদে উস্কানি যে অপরাধ তা জানেন না অধিকাংশ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রতিষ্ঠান ও নিজস্ব কম্পিউটারে সুযোগ না থাকলেও ব্যক্তিগত মোবাইল ও ট্যাবের সহায়তায় সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় দেশের ৬৫ শতাংশ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তবে সামাজিক মাধ্যমে ৬৫ শতাংশ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সক্রিয় থাকলেও শিক্ষার্থীদের অধিকাংশরই সাইবার ক্রাইম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তেমন কোন ধারণাই নেই। অপপ্রচার, উগ্রবাদের উস্কানি, কারও চরিত্র হনন করলেও যে অপরাধ হয় এবং সেই অপরাধের যে বিচার হতে পারে, সেটা সম্পর্কেও তারা খুব সামান্যই জানে। কওমির মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ ছাত্রী ও ৫৭ শতাংশ ছাত্রের সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে ধারণা আছে। দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তধ্য দেয়া হয়েছেঅ প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা বেসরকারী সংস্থা মুভ ফাউন্ডেশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে এমন চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। মুভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল হক জানিয়েছেন, জরিপের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের কওমি এবং আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কিভাবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সেটা জানা। সেই সঙ্গে কোন বিষয়গুলোতে তারা আগ্রহী, তারা কী ধরনের পোস্ট দেয় বা শেয়ার করে, উগ্রবাদ ও সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে তাদের কতটা ধারণা আছে, সে সম্পর্কে ধারণা পেতে চেয়েছি আমরা। জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি শেয়ার করে ধর্মীয় শিক্ষামূলক বা ধর্ম সংক্রান্ত বিষয়াবলী। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই সাইবার ক্রাইম সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন অপপ্রচার, উগ্রবাদের উস্কানি বা প্রচার এবং কারও চরিত্র হনন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা খুব কম। এসবের জন্য যে একটি আইন আছে এবং সে আইনের অধীনে এ ধরনের অপরাধের জন্য যে বিচার হতে পারে, সেটা সম্পর্কে তারা খুব সামান্যই জানেন। জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী সাইবার অপরাধ পরিভাষাটির সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। বাকিরা অল্প শুনেছে বা কখনই শুনেনি।

কওমি ছাত্রদের অর্ধেক ও ছাত্রীদের এক তৃতীয়াংশ সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট শেয়ার করার আগে তথ্য যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। ছাত্রদের ৭ শতাংশ একেবারেই তথ্য যাচাই করে না। ২১ শতাংশ মাঝে মাঝে, ২১ শতাংশ বিষয়টি নিয়ে ভাবে কিন্তু যাচাই করে না। ৩৩ শতাংশ কওমি ছাত্রী শেয়ার করার আগে কখনই তথ্য যাচাই করে না। ৩৩ শতাংশ যাচাইয়ের কথা ভাবে কিন্তু যাচাই করে না। ৩ শতাংশ অনলাইনে সংগঠিত অপরাধকে অপরাধ হিসেবে মনে করেন না। 

ছাত্ররা দিনের বেলায় অন্তত আধাঘণ্টা আর ছাত্রীরা রাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকেন। মুভ ফাউন্ডেশন সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের ১২ জেলায় কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে জরিপ চালায়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে, যারা মাধ্যমিক ও এর ওপরের স্তরে লেখাপড়া করছেন।

দেশের ১২ জেলার (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট, হবিগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, গাইবান্ধা ও পঞ্চগড়) ৩৬ মাদ্রাসার (২৩ কওমি ও ১৩ আলিয়া) ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণে মুভ ফাউন্ডেশন এই জরিপ চালিয়েছে।

গবেষণায় এসেছে, ৪২ শতাংশ কওমি ছাত্র এবং ৫৮ শতাংশ আলিয়া ছাত্রছাত্রী ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহার করেন। ৫ শতাংশ কওমি ছাত্র ও ১০ শতাংশ আলিয়া ছাত্রছাত্রী ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার ব্যবহার করেন। ছাত্রীদের বেশিরভাগ রাতে ও মধ্যরাতের পরে, আর ছাত্রদের বেশিরভাগ সকালে ও দুপুরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করেন। ছাত্ররা দৈনিক সর্বোচ্চ ০-৩০ মিনিট করে এতে সময় কাটান, আর ছাত্রীরা ব্যয় করেন দৈনিক ১-২ ঘণ্টা সময়।

মুভের গবেষণার সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, উত্তরদাতার মধ্যে ৭৫ শতাংশ বাড়িতে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যম ব্যব\হারের সুযোগ পান (৬৩ শতাংশ মোবাইল বা ট্যাব এবং ১২ শতাংশ কম্পিউটার ব্যবহার করেন)। মাত্র ৫ শতাংশ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) যান বা এ সম্পর্কে অবগত। বাকিরা সাইবার ক্যাফে (৫ শতাংশ), বন্ধু বা আত্মীয়ের ফোন বা কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026118755340576