উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিভাবক ও শিশুর মানসিক চাপ

খন্দকার জিয়া হাসান |

আমার গ্রাম করটিয়ায় (টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার অধীনে একটি ইউনিয়ন) ২০১০ সাল থেকে একটি ইংলিশ ভার্সন স্কুল পরিচালনা করি। এটি গ্রামপর্যায়ের দেশের প্রথম ইংলিশ ভার্সন স্কুল যা প্রায় তিন বিঘা নিজস্ব জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে ২২৫ শিক্ষার্থীর জন্য ২৫ শিক্ষকসহ ৩৬ জনের একটি টিম কাজ করে। ঢাকা থেকে এখানে ৮ জন শিক্ষক কাজ করে যার ভেতর তিনজন ঊহমষরংয খধহমঁধমব ঞবধপযরহম-এ গ.অ. পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতাধীন, পুরো ক্যাম্পাস ২ সনঢ়ং ডরঋর সুবিধা সংবলিত যা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এই সুবিধাদি নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় হাতেগোনা কিছু স্কুল আছে।

আমি এই গ্রামের ছেলে। শুধু ইংরেজীতে ভাল হবার কারণে দু’বার স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়েছি, ১২ বছর ধরে একটি দূতাবাসে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। আমার সব সময় মনে হয়, ইংরেজীতে পারদর্শী একটি জেনারেশন গড়ে তুলতে পারলে তারা এই গ্রামের তথা দেশের নাম আরও উজ্জ্বল করবে। ভূমিকা শেষ; এবার যে কারণে এত কিছু বলা।

গত ১ জানুয়ারি, ২০১৭ ঢাকা থেকে স্কুলে এসে শুনলাম ক্লাস ফাইভের একটি বাচ্চাকে বাবা-মা বাংলা ভার্সনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাচ্চাটি ছোটবেলা থেকেই ইংলিশ ভার্সনে পড়ছে। খুবই ট্যালেন্টেড একটি বাচ্চা। আমি ওকে খুব পছন্দ করি। কয়েক গার্ডিয়ান আমাকে বললেন, ‘চলুন ওদের বাসায় যাই, ওর বাবাকে একটু বোঝালেই তিনি বুঝবেন।’ গেলাম। বাবার কাছে জানতে চাইলাম, বাচ্চাকে কেন সরিয়ে নিচ্ছেন?

তিনি বললেন, ওই যে বিজ্ঞানে ফেল করেছে।

ফেল করেছে মানে?

বিজ্ঞানে তো অ+ পায় নাই। (বাচ্চাটি বিজ্ঞানে অ পেয়েছে)

গত আট বছর গ্রামের শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার উপলব্ধি হলো, এটা বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের মোটামুটি ৮৫ শতাংশ গার্ডিয়ানের মনোভাব। বাচ্চা অ+ পেলে পাস, না পেলে ফেল। যে কোনভাবে বাচ্চাকে অ+ পেতেই হবে। তাছাড়া তাদের এবং বাচ্চার সবার জীবন বৃথা কারণ বাংলা ভার্সনে তার আশপাশের প্রায় সব বাচ্চাই অ+ পেয়েছে। আলোচ্য বাচ্চাটি ইংলিশ ভার্সন থেকে ৪.৮৩ পেয়েছে, মানে হলো, পাঁচটি বিষয়ে সে ৮০-এর ওপরে পেয়েছে আর একটি বিষয়ে সে ৭০-এর ওপরে পেয়েছে। তাও আবার ইংলিশ ভার্সনে, যেখানে সারাদেশে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ৫ হাজারের নিচে, বাংলা ভার্সনের ২৫ লাখ পরীক্ষার্থীর বিপরীতে। প্রসঙ্গত বলা যায়, ইংরেজী ভার্সনে ছাত্রছাত্রীদের বাংলা ছাড়া সমস্ত বিষয় ইংরেজীতে পড়তে এবং লিখতে হয়। তাই, স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজী মাধ্যমে ‘অ’ পাওয়া বেশ কঠিন। আর এ কঠিন কাজটিই সফলতার সঙ্গে ওই বাচ্চাটি করেছে, তাও গ্রামের একটি স্কুল থেকে। কিন্তু গার্ডিয়ানের কাছে এই রেজাল্ট ফেল করার সমান। গার্ডিয়ানদের এই আকাশচুম্বী প্রত্যাশা এবং শিশুর ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ, এর ফল ভয়াবহ। ১০/১১ বছরের ফুলের শিশুদের আমরা কি এই মানসিক চাপ থেকে রেহাই দিতে পারি না? প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে বিষয়টা বিবেচনা করুন, প্লিজ!

সুত্র: জনকণ্ঠে সম্পাদকীয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052840709686279