উচ্চ আদালতে বাড়ছে বাংলা ভাষার ব্যবহার

আরাফাত মুন্না |

এ মাসের প্রথম কার্যদিবসে নদী রক্ষায় একটি রায় দেয় হাই কোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রায়টি দেয়। এ বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তাঁর অংশ ইংরেজিতে দিলেও কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রায় দিয়েছেন বাংলায়।

বিচারপতি ড. কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন নিয়মিতই বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়ে আসছেন। এখন সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবীকেই দেখা যায় বাংলায় শুনানি করতে। অনেক আইনজীবী বাংলায়ই পিটিশন লেখেন বলে জানা গেছে। আগের চেয়ে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগে মোট ৯৯ জন বিচারপতি আছেন। এর মধ্যে বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে তিনজন। সব ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ৩০ বছর আগে আইন হলেও আদালতের বিচারকাজে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। আর আদালতসহ সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে আট বছর আগে আইন কমিশনের করা সুপারিশও কার্যকর করেনি সরকার।

২০১৪ সালে দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন আইন অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছিল হাই কোর্ট। কিন্তু দেশের আদালতগুলোয় বিশেষ করে উচ্চ আদালতে মামলার শুনানি, আদেশ ও রায় লেখা হয় ইংরেজিতে। তবে আশার কথা হলো, উচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বাংলায় শুনানির পাশাপাশি রায় ও আদেশ দেওয়ার আগ্রহ আগের চেয়ে এখন বেশি দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগে বিভিন্ন মামলার রায় এখন বাংলায় দেওয়া হচ্ছে।

কোনো মামলার রায়ে আবার বাংলা ও ইংরেজির মিশেল থাকছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ করে হাই কোর্ট বিভাগে অধিকাংশ শুনানিই হচ্ছে বাংলায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বিভিন্ন মামলায় বাংলায় রায় দিয়েছেন। এ বি এম খায়রুল হক হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি থাকার সময় প্রায়ই বাংলায় রায় ও আদেশ লিখতেন। এ ছাড়া হাই কোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতির মধ্যে এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদুল হক কিছু মামলায় বাংলায় রায় দিয়েছিলেন। বর্তমানে হাই কোর্টের বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল, বিচারপতি ড. কাজী রেজা-উল হক, বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন, বিচারপতি মো. আবু তারিক, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমও রয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর মধ্যে নজরুল ইসলাম, ইয়াহিয়া দুলাল ও ইউনুস আলী আকন্দ নিয়মিতই বাংলায় পিটিশন লেখেন বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান  বলেন, ‘রায় বাংলায় না ইংরেজিতে লিখবেন তা বিচারপতিদের নিজস্ব এখতিয়ার। তবে বর্তমানে অনেক বিচারপতিই বাংলায় রায় দিচ্ছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায়ও বাংলায় রায় দিয়েছেন আমাদের বিচারপতিরা।’

এ বিষয়ে অন্যতম ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ করে হাই কোর্টের অনেক বিচারপতি বাংলায় রায় বা আদেশ লিখছেন। এটা দিন দিন বাড়ছেই।’ তিনি বলেন, ‘আইনজীবীরাও বিশেষ করে হাই কোর্টে নিয়মিতই বাংলায় শুনানি করছেন। কেউ কেউ বাংলায় পিটিশন লেখা শুরু করেছেন।’ উচ্চ আদালতে পুরোপুরিভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুরু করতে কিছু সমস্যা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিদেশি আদালতের ঐতিহাসিক রায় নজির হিসেবে দেখাতে হয়। এসব রায় ইংরেজিতে হওয়ায় আইনজীবী ও বিচারপতিদের কাছে ইংরেজি ভাষা সহজতর। এ কারণেই ইংরেজিতে রায় বা আদেশ বেশি লেখা হয়।’

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003122091293335