উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা!

কুবি প্রতিনিধি |

উচ্চ মাধ্যমিক পাস দেখিয়ে চাকরি নিয়েছেন কর্মচারী হিসেবে; কিন্তু অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে পদোন্নতি নিয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) দুই ডজন কর্মচারী।

একই সুযোগে কর্মকর্তা হতে পারবেন মাধ্যমিক পাস করে চাকরি নেয়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরাও। মনগড়া নীতিমালা করে নিয়মবহির্ভূত এমন পদোন্নতিকে প্রশাসনের তামাশা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে আবেদনের জন্য ক্ষেত্রভেদে ন্যূনতম স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করতে হয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু প্রশাসনের আশীর্বাদে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা হচ্ছেন অনেকে।

জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে প্রবেশ করেন তারা। কিন্তু চাকরি চলাকালীন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাসের সার্টিফিকেট জমা দিয়ে কর্মকর্তা হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মচারী।

একই পদ্ধতি অবলম্বন করে মাধ্যমিক পাস করে চতুর্থ শ্রেণিতে চাকরি নেয়া কর্মচারীরাও হতে পারবেন কর্মকর্তা। যেখানে সর্বমোট তিনটি পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে তাদের চাকরিজীবন শেষ করার কথা। সেখানে নামেমাত্র সার্টিফিকেট দেখিয়ে মনগড়া নীতিমালার আশীর্বাদে সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যন্ত হতে পারবেন এই কর্মচারীরা।

এক কর্মকর্তা জানান, এদের অধিকাংশের ফলাফলও খুবই নিম্নমানের। অপরদিকে তাদের বিপরীতে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে আবেদন করেও চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যোগ্য প্রার্থীরা।

এদিকে ৭১তম সিন্ডিকেটে সেকশন অফিসার পদে আবেদন করা ১২ জনকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে আবেদনকৃত পদে না দিয়ে তাদের পদে ডিগ্রি পাসের সার্টিফিকেট জমা দেয়া এমন অনেক কর্মচারীকে পদোন্নতি দিয়ে সেকশন অফিসার বানানো হয়। ফলে যোগ্যতা অধিক হওয়ার পরও বঞ্চিত হন তারা।

সেই সময়ে নিয়োগ পাওয়া এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের হাইকোর্টে রিট করার কথা ছিল কিন্তু করা হয়নি। এখন ভাবছি আমাদের অধিকার আদায় করতে তা করতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, বিগত ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ ৫২তম সিন্ডিকেটে নীতিমালা সংশোধনের নাম করে নিজের মনগড়া এমন সিদ্ধান্ত নেন। কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী কর্মচারীকে বিশেষ সুবিধা দিতে এমন লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানা যায়। যার নজির অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি।

বর্তমান উপাচার্য এমন বিধিমালা পরিবর্তন না করে উল্টো প্রথম শ্রেণির সেকশন অফিসার পদে আবেদনকারীদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেন। আর সেই শূন্যপদে কর্মচারীদের পদোন্নতি দেন তিনি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

গুঞ্জন রয়েছে, এমন সুযোগ থাকায় ডিগ্রি পাসের সার্টিফিকেট আনার হিড়িক পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মাঝে। এদিকে কর্মচারী থেকে কর্মকর্তা হওয়া ব্যক্তিদের যোগ্যতার বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

এক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের উপরের পদে হলেও অনেক সময় তাদের কাজ আমাদের করে দিতে হয়। কারণ তারা অনেক কিছুই বোঝেন না। এটা খুবই বিব্রতকর। এ নিয়ে কর্মকর্তা পরিষদের নেতারা চরমমাত্রায় অসন্তোষ থাকলেও নির্বাচনে ভোট হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ।

কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি জিনাত আমান বলেন, এখানে অনার্স এবং ডিগ্রির একটা পার্থক্য রাখা দরকার ছিল, যেটা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে তা আমরা করিনি। কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি কিন্তু এটা বন্ধ করতে পারিনি।

নিয়মবহির্ভূত এ নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, এ নীতিমালা আমার সময় করা হয়নি। আমরা এটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠাব। প্রয়োজন হলে সিন্ডিকেটে তুলে সঠিক ব্যবস্থা নেব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050029754638672