উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠার মধ্যেই মহাসমাবেশের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বাধাবিপত্তি এড়িয়ে শনিবার নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে দলটি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীকে রাজপথে থাকার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। সমাবেশে বাধা দিলে পুরো ঢাকাকে সমাবেশের নগরীতে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এমনকি যেখানে বাধা আসবে, সেখানেই প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে সংঘাতেরও আশঙ্কা করছেন অনেকে। নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা থেকেই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন।
এদিকে আগামীকাল শনিবারের শান্তি সমাবেশ ঘিরে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপি ও তার মিত্রদের মহাসমাবেশকে ঘিরে সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে রাজধানীর রাজপথ দখলে নানা কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপিকে ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে জামায়াতে ইসলামীকে শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে দুই দলকেই সমাবেশ করার ক্ষেত্রে ২৫টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শুক্রবার রাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, মহাসমাবেশ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এখানে করতে চাই। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, মহাসমাবেশে সরকার পতনের পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে। সমাবেশে বাধা দিলে পাল্টা জবাব দেবেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
বিএনপি নেতারা জানান, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ মহাসমাবেশ থেকেই পরবর্তী আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘিরে শুরু থেকেই নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে সরকার।
এই অবস্থায় শান্তি সমাবেশের দু’দিন আগে থেকেই মিছিল-সমাবেশ নিয়ে রাজপথে নেমেছেন সরকার সমর্থক নেতা-কর্মী। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীজুড়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। সেইসঙ্গে রাজধানীর অলিগলি ও পাড়া মহল্লায় দলটির নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। কোনো অবস্থায়ই বিএনপিকে ছাড় না দেয়ার মনোভাব নিয়েই এগোচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।
শান্তি সমাবেশের আগের দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে অপশক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে না আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায় বিএনপি। এজন্য সতর্কতা প্রয়োজন। যেকোনো উপায়ে সহিংসতা প্রতিহত করতে হবে।
কাদের বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দেখিয়ে দিতে চায় তারা অশান্তির বিরুদ্ধে। নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িক শাক্তিকে সঙ্গে নিয়ে অশুভ খেলার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর আরেক মুক্তিযুদ্ধ আগামীর নির্বাচন। অপশক্তিকে চিরতরে বিলিন করতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।