স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জনের ঐতিহাসিক সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় প্রশাসন এ শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলোচনা সভা, চিত্র প্রদর্শনী, ছবি আঁকা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করার নির্দেশ দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পৃথক চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। বিকাল ৩টায় বের হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন তুলে ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা রাজধানী জুড়ে সুসজ্জিত বাদকদল, তারকা খেলোয়াড় ও অভিনেতাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ ঢাকার ৪টি পয়েন্ট থেকে শোভাযাত্রা বের করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত হবেন। সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে লেজার শো, ফায়ারওয়ার্কসহ ২ থেকে ৩ ঘন্টার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
জাতিসংঘের কাছ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র শুক্রবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের হাতে তুলে দেয়া হয়। চিঠিটি তুলে দেন সিপিডি সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস।
গত ১৫ মার্চ সিপিডি জাতিসংঘ সদর দফতরে এডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনসংক্রান্ত ঘোষণা প্রদান করে। সে অনুযায়ী এই চিঠি হস্তান্তর করা হয়। তবে চূড়ান্তভাবে এই যোগ্যতা অর্জন করতে আরও ছয় বছর উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এরপর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মিলবে।
স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণে যোগ্যতা অর্জনের ঐতিহাসিক সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২২ মার্চে সকাল ১১ টায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের সামনে সমবেতভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সাফল্যের তথ্যাবলি সম্বলিত ফেস্টুন, প্লাকার্ড নিয়ে সারিবদ্ধভাবে ৩০ মিনিট অবস্থান করবে। সাড়ে এগারোটায় শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ আলোচনা অনুষ্ঠান, চিত্র প্রদর্শনী, ছবি আঁকা ও রচনা প্রতিযোগিতা, সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমিটি গঠন করে ক ও খ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের ঐতিহাসিক সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা, চিত্র প্রদর্শনী ছবি আঁকা, রচনা প্রতিযোগিতা, সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ আলোচনা অনুষ্ঠান হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের বিবেচনায় বাংলাদেশ ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। এখন জাতিসংঘের মাপকাঠিতেও বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটছে। জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত (এলডিসি), উন্নয়নশীল ও উন্নত এ তিন পর্যায়ে বিবেচনা করে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে স্বল্পোন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক (ইভিআই) এই তিন শর্ত পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসক) এর মানদণ্ড অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ১২৭৪ ডলার। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, মাথাপিছু আয় এখন ১৬১০ ডলার। ইকোসকের মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৪ পয়েন্টের প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের আছে ৭২।
অর্থনৈতিক ঝুঁকির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২। এই পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে এলডিসিভুক্ত হয়, ৩২ এ আনার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়।