সার্ভারে সমস্যাউপবৃত্তির তথ্য দিতে গলদঘর্ম শিক্ষকরা

রুম্মান তূর্য |

প্রাথমিকের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিতে নতুন পোর্টালে তথ্য অন্তুর্ভুক্তি চলছে। এখন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের শিক্ষকরা উপবৃত্তির তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করেছেন। কিন্তু তথ্য দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেক শিক্ষক। এ তিন বিভাগের শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, সার্ভার জটিলতায় তারা তথ্য অন্তুর্ভুক্ত করতে পারছেন না। সার্ভার থেকে বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। অনেক শিক্ষক সারাদিন চেষ্টা করেও সার্ভারে ঢুকতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে সব শিক্ষার্থীর তথ্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে শিক্ষকদের এ জটিলতার বিষয়ে জানালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে তা নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, জটিলতা নিরসনে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অর্থ বিভাগের বিএসিএস এবং আইবিএস প্লাস প্লাস স্কিমের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। 

জানা গেছে, গত ১৬ মে থেকে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল বিভাগের উপজেলাগুলোতে  শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রি শুরু হয়। ২২ মে পর্যন্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। 

ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা শাহিনুর আল আমিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষকরা তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে দেখছেন সার্ভার ডাউন। সার্ভারে তথ্য দিতে পারছেন না। অনেকে সার্ভারে ঢুকতেই পারছেন না। কেউ কেউ জানিয়েছেন তারা লগইন করতে পারছেন না। আবার অনেকে লগইন করলেও বারবার লগআউট হয়ে যাচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, সারাদিন চেষ্টা করে পাঁচজন শিক্ষার্থীর তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি। আরও ২ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিভাবে ২২ মের মধ্যে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করবো জানি না।

বরিশাল বিভাগের দক্ষিণ জঙ্গলীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক মো. কবির দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে সার্ভার খালি ঘুরে আর ঘুরে, তথ্য দিবো কিভাবে বুঝতে পারছি না। 

নরসিংদী জেলার একটি স্কুলের শিক্ষক সংকর চন্দ্র দাস দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে বলা হচ্ছে ‘ইন্টার্নাল সার্ভার এরর’।

মো. মহিউদ্দিন নামে এক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এভাবে কাজ চললে ১৫ দিনেও তথ্য দেয়া যাবে না। 

এসব জটিলতার বিষয়ে জানাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপপরিচালক মির্জা হাসান খসরু দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, উপবৃত্তির তথ্য দেয়ার সার্ভার কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জেলা-উপজেলা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। শিক্ষকদের জটিলতার বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলেও দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেন তিনি। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন নিয়মে রাজস্বখাতে উপবৃত্তি দেয়া হবে, প্রকল্পের মাধ্যমে নয়। এজন্য অর্থ বিভাগের বিএসিএস এবং আইবিএস প্লাস প্লাস স্কিম একটি পিইএসপি এমআইএস পোর্টাল প্রস্তুত করেছে। সে পোর্টালেই তথ্য নেয়া হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক মো. বাহারুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তা এর দায়িত্বে আছেন তিনি নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত। শিক্ষকরা যদি জটিলতায় পড়েন আমরা অবশ্যই দেখবো। এ বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। 

তিনি আরও বলেন, সার্ভার জটিলতা সাময়িক। নতুন সার্ভারের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি হতে পারে। শিক্ষকরা তাদের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানাতে পারেন। তারাও অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানাবেন। আর বৃহস্পতিবার কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবো।

প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশিকা অনুসারে, নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাবেন। বিকাশসহ যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টেই শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারবেন। উপবৃত্তি কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট প্রাক্কলন অনুসারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও অডিট অনুবিভাগ অধিদপ্তরের রাজস্ব বাজেটের নির্ধারিত কোডে টাকা বরাদ্দ করবে। অধিদপ্তর ত্রৈমাসিক চাহিদা মতো কিস্তিভিত্তিক টাকা অবমুক্ত করবে। অর্থ বিভাগ থেকে সময় সময়ে জারি করা জিটুপি পেমেন্ট পদ্ধতি অনুসারে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হবে। জিটুপি পেমেন্ট পদ্ধতির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বিত ডিজিটাল পদ্ধতির সমন্বয় করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033798217773438