সনদ বিক্রির অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া অফিস আদেশে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ মন্ত্রণালয়েরই একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ শাখার উপ-সচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উচ্চ আদালতের আদেশে দারুল ইহসানের সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে স্কুল ও কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। একই আদেশে দারুল ইহসানের সনদের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও এমপিওভুক্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে আদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “এমন আদেশের বিষয়ে আমি অবগত নই। একটু আগেই শুনলাম এমন আদেশ হয়েছে। তবে, যতদূর মনে পড়ে উচ্চ আদালতের রায়ের স্পিরিট এমন ছিলো না। রায়ের কথা সম্পূর্ণ মনে নেই, তবে যেটুকু মনে পড়ে তাতে বলা হয়েছে, সনদের গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান যাচাই করে দেখবে কোন সময়ে সনদ নিয়েছে। কারণ, শুরু থেকেই দারুল ইহসান খারাপ ছিলো না বা সনদ বিক্রির অভিযোগ ছিলো না।”
মন্ত্রণালয়ের দেয়া আদেশে স্কুল-কলেজের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলা হয়েছে। এমন আদেশ কীভাবে হয়? এমন ক্ষমতা কীভাবে বেসরকারি পরিচালনা কমিটিকে দেয়া হলো? দৈনিক শিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ঊর্ধবতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কাল অফিসে গিয়ে দেখব কিভাবে এমন আদেশ জারি হলো।”
দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং এমপিও দালালদের যোগসাজশে দারুল সনদধারীদের এমপিওভুক্তি ও সনদের বৈধতার আদেশ দেয়া হয়।
জানা যায়, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আউটার ক্যাম্পাস বন্ধের নির্দেশ জারি করার পর হাইকোর্টে রিট করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে ২৯টি আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা সম্পর্কে স্থগিতাদেশ পেলে বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি আউটার ক্যাম্পাস চালাতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। ওই স্থগিতাদেশের সুযোগে আরো তিনটি ট্রাস্টি বোর্ড পরিচালিত তিনটি ক্যাম্পাস বিভিন্ন স্থানে ৩০০টিরও বেশি শাখা ক্যাম্পাস খোলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সংকট, অনিয়ম-দুর্নীতি ও আউটার ক্যাম্পাসের মাধ্যমে সনদ বাণিজ্য বন্ধ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হককে প্রধান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি করে সরকার। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে সেই কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়, যাতে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সুপারিশ করা হয়।
২০০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৩টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং এই নামে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, আইনের দৃষ্টিতে দারুল ইহসান কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নয়।
১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার ২০০৬ পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে্ চলছিলো। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য মারা যাওয়ার পরই শুরু হয় সনদ বিক্রি যাত্রা। চলছে এখনও।