এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী কমেছে কুমিল্লা বোর্ডে

কুমিল্লা প্রতিনিধি |

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের তুলনায় কমেছে। ২০১৭ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে না ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এভাবে অস্বাভাবিক হারে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই তেমন কোন পদক্ষেপ। এছাড়া চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিলম্বে প্রশ্নপত্র বিতরণ ও ভিন্ন সিলেবাসের প্রশ্নপত্র প্রদানের ঘটনায় এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সঠিকভাবে পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। কেন্দ্র সচিবদের দায়িত্বে গাফিলতি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব এবং বোর্ড সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহল। তবে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হবে না বলে জানিয়েছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে কুমিল্লাসহ সারাদেশে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৬টি জেলায় ৯৫ হাজার ১৪৮ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে নিয়মিত ৬৫ হাজার ৭৯৪ জন এবং অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ২৭ হাজার ৯৪৮ জন। গত বছর এ বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৬৬৬ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থী কমেছে ৮ হাজার ৫১৮ জন। এদিকে ২০১৭ সালে এ বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৭৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ১ লাখ ৮ হাজার ১১ জন। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ওই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কথা থাকলেও নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া, ঝরেপড়া এবং কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কমেছে ৪২ হাজার ২১৭ জন।

শিক্ষার্থীদের বিশাল একটি অংশ বিভিন্ন কারণে ঝরে যাওয়া প্রতিরোধে তেমন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বোর্ডের। অস্বাভাবিক হারে শিক্ষার্থীদের ঝড়ে যাওয়ায় কুমিল্লার শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেকটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন শিক্ষক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। নগরীর খ্যাতনামা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষা ঘনিয়ে আসলেও তাদের শংকা এখনও কাটেনি। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার ঘটনা নিয়ে অনেকটাই উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় কোন কারণে পরিবর্তিত সিলেবাসে প্রশ্নপত্র দেয়া হলে এ দায়ভার কে নেবে এমন প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছেন তারা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী সামিয়া আলম অবন্তি জানান, ‘আমরা যে প্রস্তুতি নিয়ে গত দুই বছর লেখাপড়া করেছি।

হলে ভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রদান বা সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় যেন আমাদের পরীক্ষায় কোন রকম ব্যাঘাত না ঘটে। এ ধরনের ঘটনা পরীক্ষার হলে মনোযোগ নষ্ট করে। যা একজন শিক্ষার্থীর ফলাফল বিপর্যয়ে প্রভাব ফেলে। আশা করছি সরকার এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রতন কুমার সাহা জানান, ‘মানসম্মত শিক্ষকের অভাব এবং ইংরেজি, গণিত ও আইসিটিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে। পাশাপাশি বিগত সময়ে প্রশ্নফাঁসের প্রবণতা ছিল। কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং প্রশ্নফাঁস বন্ধ হওয়ায় আরও কিছু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। শুধু শহর নয়, গ্রাম পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ করা হলে এ সমস্যার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হবে।’ পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি কেন্দ্র সচিবগণও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে পরীক্ষার্থীরা এ ধরনের সমস্যা থেকে নিস্তার পাবে।’ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. একেএম এমদাদুল হক বলেন, ‘টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া, অভিভাবকদের সচেতন না হওয়া, ফেসবুক ও তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, মাদকাসক্ত হয়ে যাওয়া, বাল্যবিবাহ, সামাজিক অবক্ষয়ের প্রভাব, কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের যথাযথ মনিটরিংয়ে দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং শিক্ষকদের মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।’

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করবে। দেশের অগ্রযাত্রায় শিক্ষার্থীদের ঝড়েপড়া রোধে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি পরীক্ষায় কারও গাফিলতি বা দায়িত্বহীনতার কারণে ফলাফল বিপর্যয় শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এতে একটি পরিবার এবং ওই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন ভেঙে যাবে। তবে এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া জানান, ‘নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়া, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ে হয়ে যাওয়া ও ছেলেরা কর্মক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে। ঝড়ে পড়া রোধে আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কিভাবে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র বিতরণ নিয়ে সংশয়ের কোন কারণ নেই। এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে আমরা কেন্দ্র সচিবদের নিয়ে মতবিনিময় করেছি। পৃথক কক্ষে নিয়মিত এবং অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।

উল্লেখ্য, কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ৬টি জেলার ১৮৬টি কেন্দ্রে এবার এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নোয়াখালীতে ২৪টি, ফেনীতে ১২টি, লক্ষ্মীপুরে ১৫টি, চাঁদপুরে ৩৩টি, কুমিল্লায় ৭৫টি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024039745330811