কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নাগেশ্বরী মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের একটি কক্ষে পরীক্ষা চলার সময়ে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ফটোসেশন করেছেন মেডিক্যাল টিমের এক সদস্য। তোলেন সেলফিও। সেই সেলফিসহ আরো ৬টি ছবি নিজ ফেসবুকে প্রোফাইলে পোস্ট করেন ওই মেডিক্যাল সদস্য।
দ্রুত পরীক্ষার হলে ফটোসেশন করার তথ্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে অভিভাবক, পরীক্ষার্থী ও সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মেডিক্যাল টিমের ওই সদস্যর নাম হাফিজুর রহমান। তিনি নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট ও বহির্বিভাগ ইনচার্জ। তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে ছবিগুলো পোস্ট করে লেখেন, এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের মেডিক্যাল টিম এ আজ কিছু সময়।
জানা যায়, মঙ্গলবার ইংবেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় ওই কেন্দ্রের ৫নম্বর কক্ষে একজন পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে কেন্দ্র সচিব মেডিক্যাল টিমকে খবর দেন। এসময় উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার মাইদুল ইসলাম ও ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান চিকিৎসা দিতে কেন্দ্রের ওই কক্ষে যান। উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার মাইদুল ইসলাম ওই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিলেও ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান নিজের মুঠোফোনে সেলফি ও ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে কেউ স্মার্টফোন ব্যবহার করার বিধান নেই। শুধু কেন্দ্রসচিব ফিচার ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
পরীক্ষা শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তিনি বিভিন্ন দিক থেকে কমপক্ষে ১০-১২টি ছবি তোলেন। এতে পরীক্ষার্থীদের মনযোগ নষ্ট হয়। এরপর কেন্দ্র থেকে বের হয়ে তিনি ৬টি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
এ ঘটনায় সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষা কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আইন অনুযায়ী কেন্দ্রে দায়িত্বরত ব্যক্তি ও পরীক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন বা কোন প্রকার ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানে একজন মেডিক্যাল সদস্য কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ এবং পরীক্ষা কক্ষে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার দৃশ্যসহ সেলফি তুলে সেটি আবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াকে আইনের ব্যত্যয় ও কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের অবহেলার কারণ বলে মনে করছে সচেতন মহল।
জানতে চাইলে উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার মাইদুল ইসলাম পরীক্ষা কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থীর চিকিৎসা দিতে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এসময় ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে কখন সেলফি ও ছবি তুলেছে আমার জানা নেই।
জানতে চাইলে ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান পরীক্ষা কক্ষে সেলফি তোলা এবং তার ফেসবুকে দেয়ার কথা স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশটা ভালো লেগেছিল তাই সেলফি তুলেছিলাম। কোনো অসৎ উদ্দেশে ছবি তোলা হয়নি। বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে ফেসবুক থেকে ছবি ডিলিট করেছি।
কেন্দ্র সচিব ও কলেজের অধ্যক্ষ নাসিমুল ইসলাম মন্ডল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম এসে চিকিৎসা দিয়ে চলে যান। কিন্তু কে পরীক্ষা কক্ষে সেলফি তুলেছে তা আমার জানা নেই। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রে ছবি তোলা নিষেধ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কোন অবস্থাতে কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার নিয়ম নেই। সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়ার বিষয়ে আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি।