দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ৫নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের গড় মল্লিকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠ দখল করে চলছে দশ মাইল-বীরগঞ্জ মহাসড়কের কাজ। মহাসড়কের কার্পেটিংয়ে ব্যবহৃত বিটুমিন মেশানোর মেশিনের কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি, মেশিনের শব্দ ও গরম বাতাসের কারণে শিক্ষার্থীরা দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম। এসব কারণে মাদ্রাসার ৩৫০ জন শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে, শব্দ দূষণের কারণে দরজা বন্ধ করে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাহারোল উপজেলার দশ মাইল থেকে বীরগঞ্জ উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত মহাসড়কে কার্পেটিং-এর কাজ চলছে। কাজটি করছেন মেসার্স রেপআরসি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত মে মাস থেকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড় মল্লিকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠে পাথর বালি বিটুমিনের ড্রাম, ক্রাশার মেশিন, বিটুমিন মেশানোর মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ফেলে কাজ শুরু করেছে। সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরুর পর গত এক মাস থেকে বিটুমিন মেশানোর কাজ চলছে। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এসময় ওই মাদ্রাসায় পরীক্ষা চলছিল। শিক্ষার্থীরা জানান, ‘কালো ধোঁয়ার কারণে অনেক কষ্ট হয়। এ কারণে আমাদের দরজা বন্ধ করে ক্লাস করতে হয়। পাথর বালি আর মেশিনের কারণে আমরা মাঠে খেলতে পারি না। মাঠে এখন আর পিটি অনুষ্ঠিত হয় না। মাঠে ভারী যানবাহন চলাচল করায় ও মেশিন স্থাপন করায় মাঠটি কাদা পানিতে ভর্তি হয়ে গেছে। চলাচল কিংবা খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই। এজন্য মাঝে মাঝে ক্লাস তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায়।’
সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম ও স্থানীয় বাসিন্দা এস এম জিকুরুল বলেন, এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। তবে ল্যাব টেকনিশিয়ান হোসাইনকে পাওয়া গেলে তিনিও কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি অসুস্থ হয়ে বাসায় আছি। সহকারী প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ঠিকাদার সাড়ে ছয় লাখ টাকা মাদ্রাসার উন্নয়নে প্রদান করতে চেয়েছেন। তাই মাদ্রাসা কমিটি ঠিকাদারকে মাঠটি ব্যবহার করতে দিয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারের লোকজন আমাদের কাছে কিছু দিনের জন্য মাঠটি চেয়েছিলেন। আমরাও উন্নয়নের স্বার্থে মাঠটি দিয়েছি, তবে এতটা ক্ষতি হবে তা আগে বুঝতে পারিনি।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নাসিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য মাঠটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। গড় মল্লিকপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, উন্নয়নের জন্য ঠিকাদারকে মাদ্রাসার মাঠ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে আব্দুল জলিল নামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রধান শিক্ষকের রুমে ঠিকাদার এসি লাগিয়ে দিবেন এই শর্তে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা না করেই মাদ্রাসার মাঠ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজের একজন শিশু বিশেষজ্ঞ জানান, ‘বিটুমিনের কালো ধোঁয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকায় তা খুবই ক্ষতিকর। এছাড়া বয়লারের কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে। এর ফলে শিশুদের মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট ও শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়াসহ নানা রোগ হতে পারে। কাহারোল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাদ্রাসার মাঠ কিভাবে ঠিকাদার ব্যবহার করছে তা আমার বোধগম্য নয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।