এই না হলে শিক্ষা ভবনের কর্মকর্তা!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সাবেক স্ত্রীর যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে ওএসডি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের দাপটে অস্থির শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এই সংস্থাগুলোতে এখন আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র এ কর্মকর্তা। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সাসপেন্ড হওয়ার পর আব্দুর রাজ্জাক উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন। এর পর তাকে ওএসডি করে রাখা হয়। অভিযোগ উঠেছে, ওএসডি থাকা অবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী অধিদপ্তরে যোগ না দিয়ে প্রকল্প থেকে গোপনে ছয় মাসের খোরপোশ ও ভাতা তুলে নিয়েছেন তিনি। এখন আবার সেই পুরোনো প্রকল্পে (১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প) ফিরতে আবেদন করেছেন। 

সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে চলা রাজ্জাক এখন মন্ত্রণালয়েও নানা ধরনের প্রভাব খাটাচ্ছেন। তার অনিয়মের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা করে যাচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক।

সাবেক স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে ওএসডি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক

অবশ্য আব্দুর রাজ্জাক তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসব মিথ্যা, বানোয়াট। এর কোনো সত্যতা নেই। তিনি খুব শিগগিরই প্রকল্পে ফিরছেন। তার ফাইল অনুমোদন হলে দ্রুতই প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে তিনি আশা করছেন।

খোরপোশ নিতে ছলচাতুরী যেভাবে :শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকার উপকণ্ঠে ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। দ্বিতীয় স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক ও নির্যাতনের মামলার কারণে গত বছরের ২৪ নভেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই মামলায় চার্জ গঠন হয়েছে; এখন বিচারাধীন।

এর পর মন্ত্রণালয়ের ওই সাময়িক বরখাস্ত আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন আব্দুর রাজ্জাক। চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। সাময়িক বরখাস্ত আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত হলে পরবর্তী সময়ে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পদায়ন করা হয় তাকে। এরপর শুনানি শেষে গত ২০ জুলাই আব্দুর রাজ্জাকের করা রিট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। সেই হিসেবে তিনি বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত। তবে সাময়িক বরখাস্ত স্থগিত থাকার সময় গত ৩ ফেব্রুয়ারির ওএসডি আদেশটি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ আদেশ। এই হিসেবে ওএসডি আদেশটিই বলবৎ রয়েছে। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক ওএসডি হিসেবে যোগদান না করে গত ছয় মাস ধরে আইনবহির্ভূতভাবে প্রকল্প থেকেই খোরপোশ নিয়েছেন।

ঢাকা শহর এলাকায় ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের সদ্য বিদায়ী প্রকল্প পরিচালক ড. আমিরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, তিনি ওএসডি হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে যোগ দিলেও আব্দুর রাজ্জাক যোগদান করেননি। বরং গোপনে প্রকল্প থেকে ছয় মাস খোরপোশ ও ভাতা নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, তিনি প্রকল্পে থাকার সময়ে গাড়িচালক থেকে শুরু করে প্রকল্পের মোট ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী লিখিতভাবে আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেন। এ জন্য সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গত জুন পর্যন্ত নিজের খোরপোশ ও ভাতা উঠিয়ে নেন আব্দুর রাজ্জাক। সংশ্নিষ্টরা জানান, স্ত্রীর মামলায় আদালতে অভিযোগ গঠন হওয়ার কারণে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হতে পারেন, জানতে পেরেই কৌশলে গোপনে প্রকল্প থেকে খোরপোশ তুলেছেন রাজ্জাক। সাময়িক বরখাস্তের পর তার খোরপোশ উত্তোলন করার কথা ছিল অধিদপ্তর থেকে।

আলোচিত এই রাজ্জাকের বর্তমানে বরাদ্দ পাওয়া সরকারি বাসা নিয়েও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি পদে প্রভাষক হলেও বর্তমানে বরাদ্দ পেয়েছেন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার বাসা (মোহাম্মদপুর, ১/২০ নং স্যার সৈয়দ আহমদ রোড)। এ বাসায় আগে বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বাস করতেন। সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্র জানায়, মাহবুব হোসেন যখন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন তখনই এই বাসা প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাকের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ধরনের বাসা সাধারণত প্রাধিকার ক্যাটাগরির বাসা। যুগ্ম সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা বরাদ্দ পেয়ে থাকেন।

রাজ্জাকের বক্তব্য :অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সার্ভিস রুল অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করলে তাকে আর বদলি করা যায় না। সর্বশেষ ওএসডি আদেশ অনুযায়ী এখন তিনি আর সাময়িক বরখাস্ত নন। ওএসডি আদেশ কার্যকর করতে হলে আরও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হয়, সেটি এখনও জারি হয়নি। আরেকটি চিঠি জারি না করলে ওএসডি আদেশ কার্যকর হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে প্রকল্পের ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তিনি যখন প্রকল্পের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন তখনই তার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ তোলা হয়েছে। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনরা বুঝতে পেরেছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই সঠিক ছিল না। এ কারণে তার প্রকল্পে ফেরার ফাইল অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে এবং খুব দ্রুতই প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সাবেক স্ত্রীর মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেন, যৌতুকের মামলা হয়েছিল; সে মামলা খারিজ হয়ে গেছে। তার দুই স্ত্রী থাকার অভিযোগও সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030360221862793