একটি পরীক্ষার ফলাফলই কি জীবনের সব কিছু?

আতিক মাহমুদ |

যখন কেউ পরীক্ষায় ফেল করে তখন লোকজন তাকে খারাপ ভাবতে শুরু করে। লোকজনের ধারণা এমন হয় যেন এদের দ্বারা কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। এরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝাস্বরূপ। আর যারা পরীক্ষায় পাস করে তাদের ব্যাপারে মানুষজনের মনোভাব থাকে ঠিক উল্টো। সবাই উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কদর করে। তাদের সবাইকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অমূল্য সম্পদ মনে করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরীক্ষায় পাস-ফেলই কি জীবনের সব? কেন জানি আমাদের পরিবারগুলো বুঝতে চায় না, পরীক্ষার ফলাফলই জীবনের সব কিছু নয়। পরীক্ষায় ফেল করেও পরবর্তীকালে চেষ্টা করলে অনেক ভালো কিছু করা যায়। এরকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে। আমাদের সমাজের একটি দুর্বলতম দিক হলো মানুষকে তার পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে বিচার করা হয়। এটা মানুষকে যাচাইয়ের সর্বনিম্ন মানদণ্ডগুলোর মধ্যে একটি। অথচ আমাদের দেশে এটাকেই সর্বোচ্চ মানদণ্ড হিসাবে গণ্য করা হয়। এটা অন্যায়। এটা নির্মম।

পরীক্ষায় যারা ভালো করে জীবনযুদ্ধেও তারা ভালো করবে এটাই স্বাভাবিক। আর সবাই তাদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করে। তবে বাস্তবতা হলো অনেকেই পারে আবার অনেকেই তা পারে না। এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমাদের চিন্তা যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না তাদের নিয়ে। তাদের দ্বারাও ভালো কিছু করা সম্ভব। এজন্য তাদের খুব শক্ত হতে হবে, করতে হবে আগের চেয়ে আরো বেশি কঠোর পরিশ্রম। পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কোনো কিছু নেই। মানুষ ইচ্ছা করলে সব কিছুই করা সম্ভব।

গত বৃহস্পতিবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে এবারের পরীক্ষায় অকৃতকার্যের হার ৩৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের অনেকেই হতাশায় ভেঙে পড়েছে। অনেকেই ভাবছে তাদের জীবন এখানেই শেষ। তাদের দ্বারা আর কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।

যারা পরীক্ষায় খারাপ করেছে কিংবা প্রত্যাশিত ফলাফল করতে পারেনি, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই একটি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া মানেই জীবন শেষ হওয়া নয়। এখান থেকেই নতুন করে শুরু করতে হবে। মন খারাপ না করে নতুন করে প্রতিজ্ঞা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যে তুমি আজ কাঁদছো সেই তুমিই যে আগামী পাঁচ-দশ বছর পরে ভালো কিছু করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? আজ যে বন্ধুটি তোমার চেয়ে ভালো করেছে, আগামীতেও  সে তোমার চেয়ে ভালো করবে সেটিও নিশ্চিত নয়। এমন দিন আসতে পারে যেদিন নিজের কাছেই নিজেকে বিস্ময় মনে হবে। তাই পরীক্ষায় ফেল করেছি বলে মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। ধৈর্য ধারণ করে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। হতাশাকে শক্তিতে পরিণত করে নতুন উদ্যমে আবার শুরু করতে হবে। আত্মবিশ্বাসের দৃঢ়তা থাকলে খুব সহজেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। মনে রাখতে হবে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জীবন চলে না। জীবন চলে আপন গতিতে, আপন নিয়মে। জীবন কখনো থেমে থাকে না।

অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ ছেলে-মেয়েদের ওপর অযথা প্রত্যাশার চাপ না দিয়ে তাদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। সন্তানের পাশে থাকুন। তাদেরকে সাহস দিন। এমন অনেকেই আছে যে স্কুল-কলেজের গতানুগতিক পরীক্ষায় ভালো করে না কিন্তু সে ছবি আঁকায় অনেক ভালো। কেউ বা গানে, কেউ বা নাচে। অনেকের হয়তো লেখালেখির হাত অনেক ভালো। মনে রাখতে হবে গোলাপ গাছের সকল গোলাপ ফুল একই রকম সুন্দর হয় না কিন্তু একই রকম সুবাস দেয়। তাই আসুন, কাউকে অবজ্ঞা নয়, সবাইকে মূল্যায়ন করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সৌজন্যে: দৈনিক ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027902126312256