একতরফা নির্বাচনের জনক জিয়া

প্রশান্ত কুমার কর্মকার |

সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে বিএনপি একটি ব্যর্থ নির্বাচন হিসেবে দাবি করছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের হিসেবে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু বিএনপির দাবি, তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ভোট কেন্দ্রে যাননি। নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিগত ১১টি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কম-বেশি ২০ শতাংশ মানুষ ভোটে অংশ নেননি। তাই বিএনপি ঘরে বসে যে দাবি করছে, তা প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়! 

বিগত বছরগুলোতে বিএনপি যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তাতে প্রাধান্য পেয়েছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে থাকা মামলার বিষয়বস্তু। গণমানুষের কথা ততোটা গুরুত্ব পায়নি, পেলেও তা চূড়ান্ত আন্দোলনে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।  ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগ, ডামি নির্বাচন বর্জন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বিচারের নামে অবিচার বন্ধের দাবিতে বিএনপির চলমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে আদালত বর্জন কর্মসূচি দেয় বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় জামায়াতপন্থি সংগঠন বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল এবং  ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্ল্যাকার্ডে দেখা যায়, অবিলম্বে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির  চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এর বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় বাতিল করতে হবে।  

বিচারের নামে অবিচার হলে তা বন্ধ করার দাবির সঙ্গে আমিও একমত। প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা সাংবিধানিক অধিকার। প্রতিবাদ করার অধিকারও সাংবিধানিক। সেই সাংবিধানিক অধিকারের জন্যই রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন। কিন্তু রাজনীতির কারণে যদি মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে সেই রাজনীতির প্রয়োজনইবা কতোটুকু? 

আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ এর  ১৫ আগস্টের পর এদেশের রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটে যায়। পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে ও রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নেয়। অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ ও  বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত এবং বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলতে কিছু ছিলো না।    

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন। ১৪ আগস্ট মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহকে সরিয়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে তাকে নিযুক্ত করেন খুনি মোস্তাক আহমেদ। 

আমরা আরো দেখেছি, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এক অধ্যাদেশ জারি করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবাতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। জিয়াউর রহমান সেই দালাল আইন বাতিল করে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন। যাদের মুক্তি দেয়া হয়, তারা সকলেই ছিলো সাজাপ্রাপ্ত। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে জিয়া এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই গোপন সামরিক বিচারে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়া হয়। অথচ এই কর্নেল তাহেরই জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রতি হন। জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়ার জন্য ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে পাতানো খেলা হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন। সামরিক ছত্রছায়ায় সুবিধাবাদিদের দিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) গঠন করেন।  এরপর ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচনে জিয়াউর রহমান সহজেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তখন জাগদল বিলুপ্ত করে সামরিক ছত্রছায়ায় জাতীয়তাবাদী দল এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি একতরফা দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে কতিপয় সামরিক কর্মকর্তা কর্তৃক জিয়া নিহত হন। সেদিন জিয়াউর রহমান তার রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থানীয় বিরোধ মেটাতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে নিজে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। এই ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেছিলেন। তিনি ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। যাকে বলে জিয়াউর রহমানের পুনরাবৃত্তি। অনেকটা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যেভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলেন, এরশাদও সামরিক পথ অনুসরণ করে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর জিয়াউর রহমানে ন্যায় সামনিক শাসন জারি করে একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি গঠন করেন।    

মানুষ নির্বাচন বিমুখ নয়, সাধারণ মানুষ পারসেন্ট-এর মারপ্যাঁচ জানেন না। তারা এতো হিসাবও রাখেন না। তবে নির্বাচনের জয় পরাজয়ের হিসাব-নিকাশটা ঠিকই বোঝেন। এই বোঝা-পড়াটাই প্রতিটি নির্বাচনে ভোটের মাঠে ভোটারের উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ। আপনার মনে হতে পারে, এ আবার কেমন কথা আর এই বোঝা-পড়াটাই বা কী? প্রতিটি দলে সমর্থকরা একটি হিসেব করেন, তা হলো তার প্রার্থীকে ভোটে বিজয়ী করার হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ করে যখন ভোটার বুঝতে পারেন, তার প্রার্থীর জয় পরাজয় হিসাব রাজনীতিবিদদের মতো পড়ে ফেলতে পারেন। তখন স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝতে পারেন-এই হিসাবের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এই সংখ্যার ভোটাররা প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের নিশ্চিত জেনে যান বা বুঝতে পারেন বা সরল অঙ্কের জটিল সমীকরণ বা ফলাফল বের করে ফেলে। তখন সমর্থকদের একটি অংশ ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আরেকটি কারণ হলো, স্যার সম্মোধন শুনতে এবং বলতে অভ্যস্ত শ্রেণির ও বণিক শ্রেণির আগমন। যারা কখনোই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হননি। 

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আবারো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দেন। সেই সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত যৌথভাবে একটি রূপরেখা ঘোষণা করে। তারা অন্তবর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলে। গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। 

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে ৭ ডিসেম্বর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। 

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি এবং জামায়াত ১৮টি আসন পায়। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে বিএনপি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো ৫৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই নির্বাচনে ৭৫টি দল অংশ নিয়েছিলো। ২ হাজার ৭৮৭ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চ খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করা হয়। ২১ মার্চ শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন।

সামরিক-বেসামরিক স্বৈরশাসনের পর ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সংসদীয় পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার পরিবেশ নষ্ট করায় সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বিরোধীদলগুলো একযোগে সংসদ বর্জন করে। এই অবস্থায় বিএনপি সরকারের অধীনে ২০ মার্চ মাগুরা-২ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ব্যাপক কারচুপি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠে। মাগুরা নির্বাচনের পর বিরোদীদলগুলোর আন্দোলন আরো জোরদার হয়। ওই বছরের ২৪ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে তৎকালীন বিরোধীদলগুলো। কিন্ত বিএনপি জোট সরকার তা আমলে নেয়নি। বিরোধীদলের আন্দোলনের মুখে ২৪ নভেম্বর সংসদ ভেঙে দিয়ে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ৯৬-এর নির্বাচন  আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীসহ বিরোধী দল বর্জন করে।  বিএনপিসহ ৪২ দল নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে ২৭৮টি আসন পায়। এর মধ্যে ৪০ জনের বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র ১০টি আসন পেয়েছিলো। একতরফা এই নির্বাচন ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ হিসেবে দেশ বিদেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। আর নির্বাচন কমিশনের হিসাবে ভোট পড়েছিলো ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। 

সব মিলিয়ে আমরা দেখছি, বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচনের জনক ছিলেন বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এরশাদের পর খালেজা জিয়া তাকেই অনুসরণ করেন। 

আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করেন। ৩১ মার্চ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হয়। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি এবং জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসন পায়। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো ৭৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। নির্বাচনে ৮১টি দল অংশ নেয়। প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ৫৭৪ জন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদ পূর্ণ করে সংবিধান অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর পর বিচারপতি লতিফুর রহমান ব্যাপক রদবদল করেন। এর মধ্যদিয়ে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যোগ দেয়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সংঘাতময় রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়রি হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। যা এক-এগারো হিসেবে পরিচিত। 

ওয়ান-ইলেভেনে পর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। তার নেতৃত্বে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয। নির্বাচনে আওয়ামী ২৩০টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। আর বিএনপি পায় মাত্র ৩০টি আসস। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, এই নির্বাচনে ৮৬ দশমিক ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে জামায়াত চারদলীয় জোট সমর্থিত ২৯ আসনের মধ্যে মাত্র ২টি আসন পেয়েছিলো।  

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ অন্যান্যদল প্রার্থী না দেয়ায় আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়। এই নির্বাচন নিয়ে বির্তকের সৃষ্টি হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংগরিষ্ঠতা পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি–জামায়াতপন্থিরা নির্বাচন বর্জন করে। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় প্রার্থী, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথ উন্মুক্ত করে দেন। এতে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রার্থীদের নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে ভোট যুদ্ধ করতে হয়েছে। ৬২ জন নৌকা প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। এই পরাজিত প্রার্থীদেও মধ্যে ১৪ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। 

লেখক: সাংবাদিক ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028901100158691