একলেকটিক ভাষা শেখানোর একটি গণতান্ত্রিক পন্থা

মাছুম বিল্লাহ |

ভাষা শেখানোর পদ্ধতি হবে গণতান্ত্রিক, একক বা স্বৈরতান্ত্রিক নয়। একটি কৌশলকে স্বত:সিদ্ধ ধরে সেইিট শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করে অধকাংশ শিক্ষার্থীকে ভাষা শেখানোর কাজে ব্যবহার করা বোধ হয় সঠিক নয়। যে পদ্ধতি অনেক শিক্ষার্থী সহজে অনুধাবন করতে পারছে, যে পদ্ধতিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করতে পারছে এবং যে পদ্ধতির মাধ্যমে অধিকাংশ শিক্ষার্থী উপকৃত হচেছ অর্থাৎ ভাষাটি শিখছে এবং ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করতে পারছে সেই পদ্ধতিই অনুরণ করা গণতান্ত্রিক বলা যায়। একলেকটিক একটি লেবেল যা ভাষা শেখানোর শিক্ষকদের গায়ে এঁটে  দেয়া হয়েছে যারা বিভিন্ন টেকনিক, কৌশল ও কার্যাবলী  শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করেন। কোন নির্দিষ্ট পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝে, শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে একজন শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেবেন কোন ধরনের পদ্ধতি তিনি ঐ শেণিকক্ষে ব্যবহার করবেন একটি বিদেশী ভাষা শেখানোর জন্য। আমাদের দেশে ইংরেজিকেই আমরা দ্বিতীয় বা বিদেশী ভাষা বলে অভিহিত করছি।

একটি পরিচিত পাঠে  বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার করে থাকে। যেমন টিপিআর টোটাল ফিজিক্যাল রেজপন্স এবং টি বি এল। টোটাল বডি ল্যাংগুয়েজ। তবে একটি বিদেশী ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের ক্ষেত্রে হতে হবে সহজ ও সোজা। শিক্ষার্থীদের হৃদয়ঙ্গম হতে হবে আর শিক্ষককেও দেখতে হবে শিক্ষার্থীরা আসলে রেজপন্স করছে কিনা, সাড়া দিচেছ কিনা তার ক্লাসে নাকি শিক্ষার্থীরা রোবটের মতো বসে আছে অথবা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছে কিংবা বাইরে তাকিয়ে আছে। ইংরেজি বলা ও লেখার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ফ্লুয়েন্সি এবং অ্যাকুরেসির মধ্যে যে দ্বন্দ সেটি শিক্ষককে জয় করতে হবে, বুঝাতে হবে।

অর্থাৎ অনেকে ভুল ইংরেজি হলেও খুব দ্রুত ইংরেজি বলতে পারছেন কিন্তু লিখতে পারছেন না, আবার কেউ কেউ মোটামুটি লিখতে পারছেন কিন্তু বলতে পারছেন না মোটেই ——–এর কোনটিই কিন্তু  সঠিকে অর্থে ভাষা শেখা হচেছনা। এ দুটোর মধ্যে ভারসাম্য যাতে থাকে সে বিষয়টি শিক্ষককে দেখতে হবে। মূল্যায়ণ পদ্ধতিও হতে হবে এই পন্থার মতো। পড়াবো এক ধরনের আর মূল্যায়ণ হবে অন্য ধরনের সেটি হলে কিন্তু মূল্যায়ন পদ্ধতি তার কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলে। যেমন বর্তমানে প্রচলিত আমাদের কমিউনিকেটিভ ইংরেজি। আমরা বলছি কমিউনিকেটিভ ইংরেজি পড়াচিছ, বইগুলো কমিউনিকেটিভ অ্যাপ্রোসের অথচ পরীক্ষা বা মূল্যায়ন কিন্তু এখনও অনেকটাই ট্রাডিশনাল। একটি শিশু তার মাতৃভাষা যেভাবে শিখেছে এবং নতুন একটি ভাষা আত্মীকরণের ক্ষেত্রেও সেই ধরণের বাস্তবতা দিয়ে শেখাতে হবে এবং তার মূল্যায়ণটিও হতে হবে সে রকম।

আমাদের  একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, আমাদের আসল উদ্দেশ্য হচেছ শিক্ষার্থীদের বিদেশী একটি ভাষায় আমাদের ক্ষেত্রে  ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা। তা তাকে আমরা যেভাবেই শিখাই না কেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা, অর্থাৎ শিক্ষার্থী, শিক্ষাদানের অবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় রেখে ভাষা শিক্ষাদানের পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে একজন ভাষা শিক্ষককে।  অর্থাৎ শুধু গ্রামার ট্রানস্লেশন মেথড ব্যবহার করবো, অন্য কোন মেথড নয়, আবার গ্রামার ট্রানস্লেশন মেথড একেবারেই অকেজো এটি মনে করে শুধু কমিউনিকেটিভ অ্যাপ্রোচ ব্যবহার করবো তা নয়। যেখানে এবং যখন যে পদ্ধতি ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে সেটিই ব্যবহার করতে হবে। যে পদ্ধতি ব্যবহার করলে শিক্ষার্থী ভাষা শিখছে, শ্রেণিকক্ষে সাড়া দিচেছ, অংশগ্রহন করছে সেটিই আমাদের ব্যবহার করতে হবে।

এটিই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। গ্রামার ট্রানস্লেশন মেথডের যেসব অংশ বা টেকনিক উপযোগী মনে হবে সেগুলো শিক্ষাদানের কাজে অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করা, আবার কমিউনিকেটিভের যেসব অংশ উপযোগী সেগুলো ব্যবহার করা, এভাবে অনেকগুলো মেথডের সব উপযোগী, সহজ এবং জনপ্রিয় অংশগুলোই নিয়েই গঠিত হচেছ একলেকটিক মেথড তাই বলা হচেছ এটি একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। মনে রাখতে হবে সব পদ্ধতিরই  কিছু কিছু ভাল দিক আছে আবার কিছু সমস্যবহুল দিকও আছে। আর এই  ভাল খারাপ আছে বলেই তো ভাষা নিয়ে গবেষণা হচেছ এবং হবে। এটি জরুরী যে, ইংরেজি ভাষা যারা চর্চা করবেন তারা ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন এবং ইংরেজি শুনে বুঝবেন। অনেকে এটিকে মনে করেন যে, প্রতিটি শব্দই শুনে বুঝতে হবে এটিও ঠিক নয়।একটি বিষয় শুনে বুঝতে পারাটাই হচেছ কার্যকরী। প্রতিটি শব্দ না বুঝলেই যে ভাষাটি শেখা হয়নি এ ধারণাও ঠিক নয়।

একলেকটিক অ্যাপ্রোসের কথা আলোচিত হয় এব১৯৯০ দশকের দিকে এবং তখন থেকেই এর গুরুত্ব অনুধাবন করা হয় ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে । এটি জনপ্রিয় কারন শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি চাপ প্রয়োগ না করেই মোটামুটি ভাল ফল পাওয়া যায়। এই পদ্ধতির সুবিধাটি হলো শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট ধারনা থাকে যে, তারা কি শিখছে। এই পদ্ধতির ভাল দিকগুলো হচেছ বিভিন্ন ধরনের কাজ, উচচমাত্রার যোগাযোগ, প্রাণবন্তু শিক্ষা, অবজেকটিভ কোরিলেটিভ,দ্রুত ফল লাভ। এই  অ্যাপ্রোস চালু করার যুক্তি হচেছ জীবনমুখী অভিজ্ঞতাকে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে যে ধারনগুলো উপস্থাপিত হয় তার সাথে সংযোগ সাধন করা। এই পদ্ধতিতে শিক্ষকগন যেসব কার্যবালী শ্রেণিকক্ষে করিয়ে থাকেন সেগুলো তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক। অর্থাৎ হুবহু কোন ভাষাবিদের থিউরি ব্যবহার না করে একজন শিক্ষক জীবনব্যাপী এবং তাঁর পরিবেশ ও কনটেক্সট অনুযায়ী ভাষা শেখানোর কার্যবালী নির্বাচন করেন। যেমন, কমিউনিকেটিভ ইংরেজি ক্লাসে সব কথাই ইংরেজিতে বলা এটি শহর এলাকায় শিক্ষার্থীদের নিকট আনন্দদায়ক এবং উত্তেজনাকর হতে পারে কিন্তু একই পদ্ধতি গ্রামের কোন স্কুলে দেখালে তা খুব একটি কাজে লাগবে না।

আপনি সুন্দরভাবে পুরো ক্লাসটিই ইংরেজিতে নিলেন, কেউই বুঝলোনা, শ্রেণিকক্ষে সাড়া দিলনা তাহলে ঐ ক্লাসটির কি খুব মূল্য আছে? কমিউনিকেটিভ ইংরেজিতে পুরো ক্লাস ইংরেজিতে নেয়ার কথা সেটি শেণিকক্ষের অবস্থা বুঝে। কারন শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের ইংরেজি শুনে শুনে ধীরে ধীরে বুঝবে, অভ্যাস করবে কিন্তু যদি দেখা যায় যে, পুরো ক্লাসে কেউই কোন ধরনের সাড়া দিচেছনা তখন আপনাকে আলাদাভাবে অবশ্যই ভাবতে হবে। ক্লাসতো একটি রোবটের মতো হতে পারেনা। যদি দেখা যায় যে, মাঝে মাঝে বাংলা বললে শিক্ষার্থীরা সাড়া দিচেছ তবে তাদের অংশগ্রহন করানোর জন্য, তাদের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য, তাদের আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রথম প্রথম কিছু বাংলা ব্যবহার করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা মজা পেয়ে গেলে এবং অংশগ্রহন করা শুরু করলে আপনার কমিউনিকেটিভ অ্যাপ্রোচ ব্যবহার করা সহজ হবে।  সেখানে বাংলাও বলতে হবে মাঝে মাঝে। একলেকটিক অ্যাপ্রোচ তাই বলছে।

একলেকটিক অ্যাপ্রোস শিক্ষকদের তৃতীয় একটি পথ বা উপায় বাতলে দেয়। এখানে ট্রাডিশনাল এবং কগনিটিভ পদ্ধতির সমন্বয়ে ভাষা শেখানোর উপায় ব্যবহার করা হয়। ভবিষ্যতের ঝোক হলো শিক্ষার ডাইভারসিটি অর্থাৎ বিভিন্নতা। এখানে থাকে উপাদানের সমন্বীতকরন, জ্ঞান গঠন,  ইকুউটি পেডাগজি এবং প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতার ক্ষমতায়ন করা। এই পরিবর্তনগুলোকে ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্যই পরিবর্তন করা  দরকার, শিক্ষকদের চিন্তাধারারও পরিবর্তন দরকার। তবে একলেকটিজম অর্থ এই নয় যে, বিভিন্ন পদ্ধতির এলোমেলো সংমিশ্রন। বিভিন্ন পদ্ধতির সংমিশ্রন হতে হবে দার্শনিক ভিত্তির ওপর, ব্যাকগ্রাউন্ডনির্ভর এবং নিয়মমাফিক।

সাধারনত স্ট্রাকচারাল অ্যাপ্রোসের সাথে কমিউনিকেটিভ অ্যাপ্রোসের সংমিশ্রন ঘটাতে হবে। ভাষা যেহেতু স্ট্রকাচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত যা অর্থ বোঝানোর জন্য ব্যবহ্রত হয়। এই পদ্ধতি আমরা তখনই ব্যবহার করছি যখন এক ধরনের পদ্ধতির দ্বারা কাজ হয় না।আমাদের বাস্তবতার সাথে মিল রাখতে হবে আর সেটি হচেছ  বিদেশী ভাষা যারা শিখতে চায় তারা এখন আর বেশি সময় ব্যয় করতে চাননা, তারা অল্প সময়ে একটি বিদেশী ভাষা আয়ত্ব করতে চান,  ভাষাটি তারা ভালভাবে ব্যবহার করতে চান। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, ইংরেজি শেখানোর জন্য বা যে কোন বিদেশী ভাষা শেখানের ক্ষেত্রে একটি পদ্ধতিতে লেগে থাকায় প্রান্তিক ফল প্রাপ্তি হচেছ  অথবা সংক্ষিপ্ত দক্ষতা অর্জিত হচেছ ফলে নতুন কোন পদ্ধতির কথা ভাবতেই হচেছ  দেখা দিয়েছে  সিলেবাস এবং পদ্ধতির মধ্যে দন্দ্ব আর এই দন্দ্বের উত্তরই হচেছ একলেকটিক অ্যাপ্রোস।

মাছুম বিল্লাহ: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ব্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত সাবেক ক্যাডেট কলেজ শিক্ষক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032260417938232