একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বাবা-ছেলে

বগুড়া প্রতিনিধি |

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণির পর আর ক্লাসে যাওয়া হয়নি। সংসারের হাল ধরতে চাকরি নেন বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর। বিয়ে, সংসার, সন্তান নিয়েই জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারের বসয় ৫০ ছুঁয়েছে। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছায় ভাটা পড়েনি। তাই তো এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। একই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তাঁর ছেলে আসিফ তালুকদারও। 

জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের বিশাড়দিয়াড় গ্রামে। ছেলে আসিফ মথুরাপুর মুলতানি পারভীন শাহজাহান তালুকদার (এমপিএসটি) উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবা জাহাঙ্গীর আলম একই বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ছাত্র হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তিনি একই বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। জাহাঙ্গীর আলমের পরীক্ষাকেন্দ্র চিকাশি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনস্টিটিউট। আসিফ তালুকদার ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। 

এমপিএসটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, শিক্ষা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। এ ধরনের উদাহরণ সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করবে। জাহাঙ্গীর আলমকে দেখে সাধারণ মানুষ লেখাপড়ায় আরও অনুপ্রাণিত হবে বলেও তিনি মনে করছেন। 

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩ বছর বয়সে জাহাঙ্গীর আলমের মা-বাবা মারা যান। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। অভাবের কারণে তাঁর আর লেখাপড়া করা হয়নি। কোমল হাতে সংসারের হাল ধরেন। জড়িয়ে পড়েন কৃষিকাজে। এর মধ্যে ২০ বছর বয়সে বিয়ে করেন। পরে এমপিএসটি উচ্চবিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি নেন।

জাহাঙ্গীর আলমের বড় মেয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। বড় ছেলে আসিফ তালুকদার এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আর ছোট ছেলে প্লে গ্রুপে লেখাপড়া করছে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু পারিনি। সংসারে চালাতে বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছি। ছেলের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ালেখা করছি। সমাজে আর দশজন মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লেখাপড়া শুরু করেছি।’

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স লাগে না। কেবল ইচ্ছাশক্তি, মনোবল আর একটু প্রচেষ্টা পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। এই লক্ষ্য নিয়ে নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পড়াশোনার পথ বেছে নিয়েছেন।

আসিফ তালুকদার বলে, বাবার সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে গর্ববোধ করছে। পড়াশোনা করে সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার ইচ্ছা তাঁর।

ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের সচিব বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, শিক্ষার আসলে কোনো বয়স নেই। এই বয়সে সেটা বুঝতে পেরে জাহাঙ্গীর আলম লেখাপড়া শুরু করেছেন, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026421546936035